কোরআনের সুপারিশে মুক্তি পাবেন যারা

কোরআনের সুপারিশে মুক্তি পাবেন যারা

প্রতিকী ছবি

হাশরের দিন বান্দার নেক আমল নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকাসহ সব ইবাদতের একেকটা আকৃতি থাকবে এবং তারা মানুষের মুক্তির জন্য ভূমিকা রাখবে। এসবের মাঝে কোরআনের ভূমিকা থাকবে বেশি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (স.) বলেন, ‘কোরআন ও রোজা আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশাত মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তখন আল্লাহ তাআলা সুপারিশ কবুল করে নিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) সহিহ মুসলিমে আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তেলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৪)

সহিহ ইবনে হিব্বানে এসেছে, ‘কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবুল করা হবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পথপ্রদর্শক বানাবে কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পশ্চাতে ফেলে রাখবে কোরআন তাকে জাহান্নামে পাঠাবে।’ (ইবনে হিব্বান: ১২৪)

অতএব, কোরআন শুদ্ধভাবে পড়ার ও শেখার চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কোরআন শিক্ষা দেয়।’ (আবু দাউদ: ১৪৫২) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সহি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ: ১৪৫৮; মুসলিম: ১৮৯৮)

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তেলাওয়াত করল তার বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে ১০ গুণ, একথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।’ (তিরমিজি: ২৯১০)

কোরআন তেলাওয়াতকারীদের মর্যাদা অনেক বেশি। তাদেরকে আল্লাহর পরিজন বলা হয়েছে হাদিসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কতক লোক আল্লাহর পরিজন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ: ২১৫)

হাশরে কোরআন তেলাওয়াতকারীদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) বলেছেন, কোরআন কেয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে।’ (তিরমিজি: ২৯১৫)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) বলেছেন, (কেয়ামতের দিন) কোরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাকো এবং উপরে আরোহণ করতে থাকো এবং দুনিয়ায় যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে, ঠিক সেইরূপে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে থাকো। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে সেখানেই তোমার স্থান।’ (তিরমিজি: ২৯১৪)

আলেমদের পরামর্শ হলো—প্রতিদিন হাফেজ নন এমন ব্যক্তির এক পারা কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। যেন মাসে এক খতম পূর্ণ হয়ে যায়। আর হাফেজদের তিন পারা তেলাওয়াত করা উচিত। যারা কোরআন না পড়তে পড়তে এমনভাবে ভুলে যায় যে দেখেও পড়তে পারে না। তাদের ব্যাপারে হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। তারা কেয়ামতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (আবু দাউদ: ১৪৭৪)

বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের পাশাপাশি সুন্দর কণ্ঠে কোরআন পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন শরিফ পড়, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।’ (শুআবুল ইমান: ২১৪১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রতিদিন যত বেশি সম্ভব সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতের তাওফিক দান করুন। কোরআন অধ্যয়নের তাওফিক দান করুন। কেয়ামতের দিন কোরআনের সুপারিশ নসিব করুন। আমিন।