শর্তহীনভাবে সংলাপে এলে স্বাগত জানাব : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শর্তহীনভাবে সংলাপে এলে স্বাগত জানাব : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শর্তহীনভাবে সংলাপে এলে স্বাগত জানাব : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শর্তহীনভাবে সংলাপে বসতে সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, শর্তহীনভাবে যারা আসবেন, তাদের স্বাগত জানাব। আমরা দরজা বন্ধ রাখিনি। তবে সবকিছু হতে হবে সংবিধান অনুসারে।

বুধবার (১ নভেম্বর) বাংলাদেশে ব্রিটেনের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকের সাথে সাক্ষাৎ শেষে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সারাহ কুক (ব্রিটেনের হাইকমিশনার) সংলাপের বিষয়টি তুলেছেন। আমরা বলেছি, আমরাও সংলাপে বিশ্বাস করি। সারাহ কুকও বলেছেন, সংলাপের প্রয়োজন আছে।’

প্রসঙ্গত, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি দুই মেরুতে অবস্থান করছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা বলছে, ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে বর্তমান সরকারের অধীনে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুটিই বিতর্কিত। সরকারের অধীনে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমানে তারা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের দলীয় জোট বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনড়।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও ব্যবসায়ীক বন্ধু রাষ্ট্রগুলো সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে দুই দলই অনীহা প্রকাশ করেছেন এতদিন। এমনকি গত ৩১ অক্টোবর বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন নিয়ে শর্তহীন সংলাপে বসার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?

বিএনপিকে খুনিদের দল আখ্যা দিয়ে দলটির সাথে সংলাপের বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খুনিদের সাথে আবার কিসের সংলাপ? পুলিশকে পিটিয়ে মারল। ওগুলো মানুষের জাত নাকি? ট্রাম্প সাহেবের সাথে বাইডেন সংলাপ করছে? ট্রাম্প-বাইডেনের সংলাপের দিন আমরাও সংলাপ করব। তাদের সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা আছে।’

এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি যাচাই করতে গত ৭ অক্টোবর ঢাকায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় সরকারি-বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন।

ঢাকা সফর শেষে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের রাজনৈতিকদের প্রতি ৫টি সুপারিশ দিয়েছে। সেখানে প্রধান আলোচ্য ছিল সংলাপ।

এরপরই সংলাপের বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। এতদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কোনো ধরনের সংলাপের সুযোগ নেই। বিএনপি সংলাপের পথ বন্ধ করেছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সুপারিশের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিএনপি যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হলে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

পরে আওয়ামী লীগের এই শর্ত নাকচ করে দেয় বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল একটা বিবৃতি দিয়েছেন। এ বিবৃতির প্রধান কথা সংলাপ।’ সেটার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আমরা তখনই আলোচনায় বসতে রাজি আছি, যখন বিএনপি সমস্ত শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনা আসবে।’