বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে রাশিয়ার উৎসাহের কারণ কী

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে রাশিয়ার উৎসাহের কারণ কী

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে রাশিয়ার উৎসাহের কারণ কী

রাশিয়া দাবি করেছে যে বাংলাদেশের নির্বাচন স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে চাওয়ার নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা।মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার এক ব্রিফিং-এ ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে ঢাকায় সরকার বিরোধী সমাবেশের পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এসব তথ্যের বিষয়ে কোন বক্তব্য এখনো আসেনি।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য প্রায় দু'বছর ধরেই বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু আয়োজনের তাগিদ দিয়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন ব্যক্তিদের জন্য ঘোষিত ভিসা নীতিও ইতোমধ্যে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে রাশিয়ার দিক থেকে আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগ এসেছে।চলতি বছর জানুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তখনকার মুখপাত্র নেড প্রাইস এ ধরনের বক্তব্যকে ‘রুশ প্রোপ্যাগান্ডা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

নেড প্রাইস তখন আরও বলেছিলেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উপস্থিতি আছে এমন প্রতিটি দেশে আমরা নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলজুড়ে বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে দেখা করি এবং অবশ্যই এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে”।তবে এবার রাশিয়া ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরোধী দলের সঙ্গে যোগসূত্রের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে যে দাবি করেছে তা নিয়ে কোন বক্তব্য মার্কিন প্রশাসন থেকে এখনো আসেনি।

যদিও বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক ও বিশ্লেষক শাহাব এনাম খান- তারা উভয়েই বলছেন ভূ-রাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা যেমন বেড়েছে, তেমনি একই কারণে রাশিয়াও সক্রিয় হয়েছে।একই সঙ্গে তারা উভয়েই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কার্যক্রমকে রাশিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ হিসেবে বলছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে রাশিয়া নিজেও পাল্টা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তিক্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিফলনটাই প্রকাশ পাচ্ছে এখানে এবং এর ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে তাদের পারস্পারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি মঞ্চ।ওদিকে বিরোধী দল বিএনপি আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে 'রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মন্তব্য একটি স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক'।

কী বলা হয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে

বাংলাদেশের রাশিয়ার দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বক্তব্য ছবিসহ উদ্ধৃত করা হয়েছে।

সেখানে তিনি বলেছেন, “আমরা বারবার একটি বিষয় তুলে ধরছি যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আড়ালে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন”।তার অভিযোগ ‘অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একটি সরকার বিরোধী সমাবেশ আয়োজনের জন্য স্থানীয় বিরোধী দলীয় এক সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন’।

প্রসঙ্গত, গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ছিলো এবং সেটি পর্যন্ত পণ্ড হয়ে গিয়েছিলো। এরপর থেকে বিএনপি ধারাবাহিক ভাবে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে ঘোষণা করা আসছে।

এর মধ্যেই গত তেরই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সরকারী দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন।জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে এ ধরণের সংলাপের জন্য এখন সময় নেই। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে সংলাপের পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সরকারের।

দল দুটির এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন আগামী সাতই জানুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে।তবে তৌহিদ হোসেন বলছেন, “নির্বাচন বা রাজনীতি নিয়ে দুই দেশ কথা বললেও মুল বিষয় হলো ভূ রাজনৈতিক। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বললে রাশিয়াও তার অবস্থান ব্যক্ত করছে”।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের সমালোচনা করলেও চীন, ভারত এবং রাশিয়া সেটি করেনি।

রাশিয়ার অভিযোগ কী নতুন?

বাংলাদেশকে ঘিরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া ব্যাপকভাবে নজরে এসেছিলো গত বছরের শেষের দিকে।বিশেষ করে বাংলাদেশের তাদের কূটনীতিকদের কার্যক্রম নিয়ে দুই পরাশক্তি তখন একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য দিয়েছিলো।গত বছর ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকায় একজন নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসায় ঘিয়ে ফেরার পথে একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

এরপর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে ওই ঘটনার বিষয়ে বলেছিলেন, ““একজন মার্কিন কূটনীতিকের কার্যক্রমের প্রত্যাশিত ফলাফল এই ঘটনা, যিনি বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের যত্ন নেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।”এরপর ২০শে ডিসেম্বর রুশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয় ‘বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সব সময় মেনে চলায় রাশিয়া ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

আবার রাশিয়ার দূতাবাসের ওই বিবৃতির খবর শেয়ার করে মার্কিন দূতাবাস একুশে ডিসেম্বর টুইট করে লেখে ‘এটা কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?’এ নিয়ে আরও কয়েকবার পাল্টাপাল্টি টুইট করে ঢাকার রুশ ও মার্কিন দূতাবাস। তখন ২২শে ডিসেম্বর মারিয়া জাখারোভা আবার মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “ “সম্প্রতি তার (পিটার হাস) ব্রিটিশ ও জার্মান মিশনের সহকর্মীরাও একই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন এবং আগামী বছরের শেষে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার বিষয়ে প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মূলনীতিকে লঙ্ঘন করার এমন কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য।”মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসি বাংলাকে বলছেন দুই পরাশক্তির মধ্যে একটি প্রতিযোগীতার প্রবণতা রয়েছে।

"এই কৌশলগত দিক বিবেচনা করলে বলতে হয় যে ওয়াশিংটনকে বিপাকে ফেলতে যে কোন জায়গায় সম্ভাব্য সব সুযোগকে মস্কোর কাজে লাগানোর বিষয়টা বিস্ময়কর কিছু নয়। রাশিয়া জানে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ঢাকা পছন্দ করছে না। সে কারণেও তারা সানন্দে এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে," বলছিলেন তিনি।

নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে রাশিয়া উৎসাহী কেন

বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কয়েক দশক দেশটির নির্বাচন রাজনীতি নিয়ে রাশিয়াকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। তবে ২০১০/১২ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে রাশিয়া।আর রাশিয়ার জন্য যে বাংলাদেশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেটি প্রকাশ পায় প্রথম কোন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সের্গেই লাভরভের চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরের মাধ্যমে।

মূলত গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো যখন ক্রমাগত চাপ তৈরি করছিলো তখনি তিনি ঢাকা সফরে আসেন।এরপর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে রাশিয়া।মস্কোতে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি উইথ বাংলাদেশ এর সভাপতি মিয়া সাত্তার বলছেন, রাশিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের 'রেজিম চেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনের নীতি'।

"বিশ্বজুড়ে যেখানেই যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থে কোন সরকার পরিবর্তনের অনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে রাশিয়া তার বিরোধিতা করে। বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং রাশিয়া তার মূল্য দেয়। কিন্তু কখনো রাশিয়া এখানে সরকার পরিবর্তন বা পছন্দনীয় সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র যখন এটি করতে চাইছে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ঢাকায় বিশ্লেষকরা মনে করেন রাশিয়ার সক্রিয় হয়ে ওঠার মুল কারণ হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাশিয়া কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে এবং ইতোমধ্যে ইউরেনিয়ামের চালানও বাংলাদেশে এসে গেছে।তৌহিদ হোসেন বলছেন এর আগে দু'দেশের মধ্যে এক্সচেঞ্জ কর্মসূচিগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিলো কিন্তু রূপপুরের মাধ্যমে সেটি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

“রূপপুর দিয়েই পরিবর্তনটা এসেছে। এখন তাদের জন্য বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। স্থিতিশীলতা বলছে রাশিয়ানরা মনে করে এক সরকার অনেকদিন ক্ষমতায় থাকলে তাদের জন্য কাজের সুবিধা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. হোসেন।শাহাব এনাম খানও এ বক্তব্যের সাথে একমত। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন রাশিয়া বাংলাদেশে সিভিল নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সাপ্লাই করছে এবং সে কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং তাদের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

“ভূ-কৌশলগত ভাবে বাংলাদেশ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কোন সময়ের চেয়ে। এর এখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ইউরেনিয়াম এখন বাংলাদেশে। তারা যাদের ইউরেনিয়াম সরবরাহ করে সেসব দেশের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্কের বিষয়টিও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. খান।তৌহিদ হোসেন অবশ্য বলছেন বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসার কারণেও রাশিয়ার তৎপরতা বেড়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক মেরুকরণ এখন অনেক বেশি স্পষ্ট। চীন রাশিয়ার কৌশলগত মিত্র। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য রাশিয়া গ্রহণ করতে চায় না। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকা গ্রহণ করতে পারছে না রাশিয়া,” বলছিলেন মি. হোসেন।মি. হোসেন ও মি. খান উভয়েই বলছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও কার্যত উভয় দেশই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েই কথা বলে যাচ্ছে।

মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন মস্কো এখন বাংলাদেশের সাথে তার উষ্ণ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে তার বিনিয়োগের বিষয়টি উপভোগ করছে।"এটা এমন একটা দেশ (বাংলাদেশ) যেটিকে রাশিয়া তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। সেটিও রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করতে উৎসাহিত করেছে। এর আগেও বাংলাদেশকে নিয়ে টুইটারে একে অন্যের বিরুদ্ধে বলতে দেখেছি দুই দেশকে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

রাশিয়ার মন্তব্য নিয়ে বিএনপির বিবৃতি

বিএনপি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক (এফএমএ) মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তাঁর এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে যে টুইট করেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

"এফএমএ মুখপাত্রের মন্তব্য একটি স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই ভ্রান্ত তথ্য তথা অপব্যাখ্যার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে," দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয় বিএনপি'র সমাবেশ আয়োজনে কোন বিদেশী কূটনীতিক সহায়তা করেছেন, এমন অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত অভিযোগ ইতিপূর্বে উত্থাপিত হয়নি।"এই ধরণের বাস্তবতা-বিবর্জিত বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্খার বিরোধী বলে প্রতীয়মান। কার্যত, মিস জাখারোভার দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রকামী জনগণের স্পৃহাকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে, দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থাকেই সমর্থন করে," বিবৃতিতে বলা হয়।

 

সূত্র : বিবিসি