ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য হামাস যেভাবে প্রস্তুত হয়েছিল

ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য হামাস যেভাবে প্রস্তুত হয়েছিল

ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য হামাস যেভাবে প্রস্তুত হয়েছিল

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দীর্ঘদিন ধরে চলা আক্রমণ, বসতি স্থাপন এবং ফিলিস্তিনিদের নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঢুকে হামলা চালানোর কথা জানায় গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এর পাল্টা হিসেবে সেদিন থেকেই অবরুদ্ধ গাজায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।হামাস হঠাৎ করে ইসরাইলে হামলা চালালেও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পরই হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এ সংগঠনটি।

বিবিসি বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছে এভাবে-

বিবিসি নিউজের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলায় হামাসের সাথে যোগ দিয়েছিল পাঁচটি মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী। ২০২০ সাল থেকে তারা এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল।

গোষ্ঠীগুলো গাজায় যৌথভাবে যে প্রস্তুতি নিয়েছিল তার সাথে ইসরাইলের ওপর হামলার সময় ব্যবহৃত কৌশলের সাদৃশ্য রয়েছে।তারা এসব মহড়া চালিয়েছিল এমন স্থানে যেখান থেকে ইসরাইলের সাথে ‘সীমানার’ দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম এবং এই ভিডিও তারা সমাজমাধ্যমেও পোস্ট করে।

এই মহড়ার সময় বন্দীদের কিভাবে নিজেদের হেফাজতে নেয়া হবে, কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর কৌশল এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা-সহ একাধিক বিষয় তারা অনুশীলন করে। তাদের শেষ মহড়াটি হয়েছিল ৭ অক্টোবরের হামলার ২৫ দিন আগে।বিবিসি আরবি এবং বিবিসি ভেরিফাই নানা প্রমাণ সংগ্রহ করেছে যা থেকে দেখা যায়, হামাস কিভাবে গাজার বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের ওপর হামলা চালিয়েছিল, যা পরে যুদ্ধের আকার নেয়।

ঐক্যের প্রতীক
হামাসের প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়া ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর চারটি মহড়ার মধ্যে প্রথমটিকে (যার কোডনেম ছিল স্ট্রং পিলার) গাজার মুক্তিকামী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ‘শক্তিশালী বার্তা এবং ঐক্যের চিহ্ন’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।গাজার মুক্তিকামী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হামাস ছিল ওই জোটের সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি। ‘যৌথ অপারেশন রুম’-এর তত্ত্বাবধানে হওয়া মহড়াগুলো অনেকটা ‘ওয়ার গেম’-এর মতো যাতে অংশগ্রহণের জন্য আরো ১০টি ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী উপগোষ্ঠীকে একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছিল ওই জোটটি।

গাজার মুক্তিকামী গোষ্ঠীগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধীনে আনার জন্য ২০১৮ সালে এই কাঠামোটি তৈরি করা হয়েছিল।হামাস ২০১৮ এর আগ পর্যন্ত গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিকামী দল প্যালেস্টানিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)-এর সাথে সমন্বয়ে কাজ করতো। হামাসের মতোই, পিআইজে-ও যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষিত।

এর আগেও হামাস অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে কাঁধ মিলিয়ে একাধিক সঙ্ঘাতের সময় যুদ্ধ করেছে, তবে ২০২০ সালের মহড়াটি প্রমাণ করে এসব উপগোষ্ঠী এইবার একত্রিত হয়েছে।হামাসের নেতা বলেছেন, প্রথম মহড়া ছিল মুক্তিকামী গোষ্ঠীগুলোর ‘স্থায়ী প্রস্তুতির’ প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মহড়াটি ছিল তিন বছর ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া চারটি যৌথ মহড়ার মধ্যে প্রথম, যার প্রতিটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশ করা রয়েছে।

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে পোস্ট করা ফুটেজে ‘স্ট্রং পিলার’ মহড়ার সময় হামাসের সাথে প্রশিক্ষণ নেয়া পিআইজে-সহ ১০টি গোষ্ঠীকে দৃশ্যত চিহ্নিত করেছে বিবিসি।পাঁচটি গোষ্ঠী ৭ অক্টোবরে হওয়া ওই হামলায় অংশ নেয়ার দাবি জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছিল। অন্য তিনটি গোষ্ঠীও টেলিগ্রামে লিখিত বিবৃতি দিয়ে ওই একই হামলায় অংশ নেয়ার দাবি জানায়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল থেকে গাজায় বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া একাধিক নারী ও শিশুকে খুঁজে বের করার জন্য হামাসের ওপর চাপ বাড়ার পর এই গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।পিআইজে, মুজাহিদিন ব্রিগেড এবং আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেড নামে তিনটি গোষ্ঠী দাবি করেছে যে হামাসের পাশাপাশি তারাও ওই দিন ইসরাইলি বন্দীদের আটক করেছিল।গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা হামাসের জিম্মিদের খুঁজে বের করার ওপর নির্ভর করছে।

হামাসের বিবৃতিতে বারবার গাজার বিভিন্ন মুক্তিকামী উপগোষ্ঠীর মধ্যে ‘ঐক্যের’ বিষয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এ কথাও জানানো হয়, ইসরাইলের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনায় তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও যৌথ মহড়ায় প্রতিটি গোষ্ঠী সমান অংশীদার ছিল।প্রথম মহড়ার ফুটেজে দেখা যায়, একটি বাঙ্কারে মহড়া পরিচালনা করতে আসা মুখোশধারী কমান্ডারদের। রকেট নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহড়া।

পরের দৃশ্যে দেখা যায়, মহড়া চলাকালীন মুক্তিকামী যোদ্ধারা ইসরাইলি পতাকা দিয়ে চিহ্নিত একটি নকল ট্যাংকের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের গোষ্ঠীরই এক সদস্যকে বন্দী সাজিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।আমরা ভিডিও এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতি থেকে জানতে পেরেছি, প্রায় একই রকমভাবে ৭ অক্টোবর সৈন্যদের আটক করা হয়েছিল। ওই দিন হামাসের আক্রমণে প্রায় ১,২০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং আনুমানিক ২৪০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল।

পুরো বিশ্বের কাছে ঘোষণা
প্রায় এক বছর পরে দ্বিতীয় ‘স্ট্রং পিলার’ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল।ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের (হামাসের মুক্তিকামী শাখার আনুষ্ঠানিক নাম) কমান্ডার আয়মান নোফাল বলেন, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাসের মহড়ার লক্ষ্য ছিল ‘প্রতিরোধকারী দলগুলোর ঐক্য নিশ্চিত করা’।

তিনি বলেন, এই মহড়াগুলো ‘শত্রুদের জানাবে, গাজা সীমান্তের দেয়াল ও প্রকৌশল ব্যবস্থা তাদের রক্ষা করতে পারবে না।’হামাসের আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, এই যৌথ সামরিক মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল ‘গাজার নিকটবর্তী অঞ্চলের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করা।’

এই মহড়ার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এবং এই ঘটনাকে চিহ্নিত করার জন্য যোদ্ধাদের প্রচারমূলক চিত্রগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল যাতে ভবনগুলো খালি এবং একটি সামরিক ঘাঁটির প্রতীক হিসেবে তৈরি একটি বেস-এ ট্যাঙ্ক দখল করতে দেখা যায়।মহড়াগুলো ইসরাইলেই হয়েছে, তাই এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় যে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।

এর আগে হামাসের প্রশিক্ষণ ব্যাহত করতে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বিমান হামলা চালিয়েছে। স্ট্রং পিলার মহড়ার জন্য ব্যবহৃত সাইটে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তারা প্রথম বোমা বর্ষণ করে।হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে গাজা সীমান্তের কাছে নজরদারির কাজে নিবিষ্ট নারী রক্ষীরা অস্বাভাবিক উচ্চতায় হওয়া ড্রোন কার্যকলাপের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। হামাস তাদের অবস্থানের প্রতিলিপিসহ পর্যবেক্ষণ পোস্টগুলো দখল করার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছিল।

কিন্তু ইসরাইলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সতর্কবার্তাগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।গাজায় আইডিএফের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আভিভি বিবিসিকে বলেন, ‘অনেক গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে তারা এই প্রশিক্ষণগুলো নিচ্ছে- সর্বোপরি, ভিডিওগুলো জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি সীমান্ত (ইসরাইলের সাথে) থেকে মাত্র কয়েক শ’ মিটার দূরে ঘটছে।’

তবে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী এই মহড়া সম্পর্কে জানলেও তারা ‘কিসের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তা তারা জানতে পারেনি।’আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর হামাসের প্রথম জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতা নোফালকে ‘নির্মূল’ করে।

অগোচরে লুকিয়ে থাকার শৈলী
মহড়াটি বাস্তবসম্মত কিনা তা নিশ্চিত করতে হামাস অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছিল।মহড়ার অংশ হিসেবে যোদ্ধারা ২০২২ সালে আইডিএফ নিয়ন্ত্রিত গাজা ও ইসরাইলের মধ্যস্থিত রুট- এরেজ ক্রসিং থেকে মাত্র ২.৬ কিলোমিটার (১.৬ মাইল) দূরে নির্মিত একটি নকল ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল।গাজার সুদূর উত্তরে, ‘ব্যারিয়ার’ থেকে মাত্র ৮০০ মিটার (০.৫ মাইল) দূরে অবস্থিত ওই অঞ্চলের আকাশের চিত্রের সাথে প্রশিক্ষণের ফুটেজে দেখা জায়গাটির ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সামঞ্জস্য লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে বিবিসি ভেরিফাই। নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত ওই স্থানটি এখনো বিং মানচিত্রে দৃশ্যমান।

প্রশিক্ষণ শিবিরটি একটি ইসরাইলি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং উত্তলিত পর্যবেক্ষণ বাক্সের (যে নিরাপত্তা বাধারগুলো ইসরাইল শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে) ১.৬ কিলোমিটার (১ মাইল) এর মধ্যে অবস্থিত ছিল।মক বেসটি মাটির স্তর থেকে কয়েক মিটার নিচে খনন করা জমিতে রয়েছে। তাই এটি নিকটবর্তী কোনো ইসরাইলি টহলদলের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান নাও হতে পারে- তবে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া অবশ্যই নজরে আসবে। বিশেষত, যখন আইডিএফ-এর বিমান নজরদারি ব্যবহার করে বলে জানা গিয়েছে।

হামাস এই স্থানটি বিভিন্ন ইমারতে হামলা, বন্দুক দেখিয়ে বন্দী করা এবং নিরাপত্তা বাধা ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করেছিল।বিবিসি ভেরিফাই গাজা জুড়ে নয়টি জায়গায় ১৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শনাক্ত করতে স্যাটেলাইট চিত্র-সহ সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ তথ্য ব্যবহার করেছে।

এমনকি তারা জাতিসঙ্ঘের সহায়তাপ্রাপ্ত সংস্থা বিতরণ কেন্দ্র থেকে ১.৬ কিলোমিটার (১ মাইল) এরও কম দূরত্বে থাকা একটি স্থানে দু’বার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ওই স্থানটি সংস্থাটি দ্বারা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি অফিসিয়াল ভিডিওর পটভূমিতেও দৃশ্যমান ছিল।তথাকথিত যৌথ কমিটি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সামরিক উর্দি পরিহিত পুরুষদের গাজা ‘ব্যারিয়ার’ বরাবর সামরিক কার্যকলাপের নজরদারি করার ছবি প্রকাশ করে।

দু’দিন পরে, চতুর্থ ‘স্ট্রং পিলার’ সামরিক মহড়াটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ৭ অক্টোবরের মধ্যে, নজিরবিহীন ওই আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত রণকৌশল অভ্যাস করা হয় সে সময়।যোদ্ধাদের একই ধরনের সাদা টয়োটা পিকআপ ট্রাকে চড়তে দেখা গেছে যা পরের মাসে দক্ষিণ ইসরাইলের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

প্রোপাগান্ডা ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দুকধারীরা নকল ভবনে হামলা চালাচ্ছে এবং ভেতরে থাকা ডামি লক্ষ্যবস্তুতে গুলি বর্ষণ করছে, পাশাপাশি একটি নৌকা ও জলের নিচে ডুবুরিদের ব্যবহার করে সৈকতে হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ইসরাইল জানিয়েছে, তারা ৭ অক্টোবর তাদের উপকূলে হামাসের নৌকা নৌকাগুলো নোঙর হওয়া থেকে আটকায়।তবে হামাস স্ট্রং পিলার প্রোপাগান্ডা ভিডিও-র অংশ হিসেবে তাদের মোটরসাইকেল এবং প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণের কোনো প্রচার করেনি।

৭ অক্টোবরের তিন দিন পর হামাসের পোস্ট করা একটি প্রশিক্ষণ ভিডিওতে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য বেড়া ও বাধা ভেঙে ফেলতে দেখা যায়। ওই একই রীতি অনুসরণ করে দক্ষিণ ইসরায়েল কমিউনিটিতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এর আগে একই ধরনের ভিডিও দেখা যায়নি।প্যারাগ্লাইডিং সরঞ্জাম ব্যবহার করা যোদ্ধাদের ফুটেজও ৭ অক্টোবরের আক্রমণ শুরু না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

হামলার দিন শেয়ার করা একটি প্রশিক্ষণ ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দুকধারীরা গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফার উত্তরে অবস্থিত একটি বিমানবন্দরে কিববুৎজে অবতরণ করছে।বিবিসি ভেরিফাই প্রমাণ পেয়েছে যে এটি ২০২২ সালের ২৫ আগস্টের কিছু সময় আগে রেকর্ড করা হয়েছিল এবং ঈগল স্কোয়াড্রন নামে একটি কম্পিউটার ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। হামাস তাদের বিমান বিভাগের জন্য এই নাম ব্যবহার করে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে প্যারাগ্লাইডার পরিকল্পনাটির উপর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা হয়েছে।

বিস্ময়কর বস্তু
৭ অক্টোবরের আগে আইডিএফ কমান্ডারদের উক্তি দিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। এও মনে করা হয়েছিল যে হামাস ছোট ছোট গোষ্ঠী থেকে কয়েক হাজার যোদ্ধাকে নিজেদের দলে ভেড়াতে পারে।অন্যান্য গোষ্ঠীর সমর্থন ছাড়াই ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হামাস এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। যা ইঙ্গিত দেয় যে অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার পেছনে ছিল, গাজার অভ্যন্তরে সমর্থন বাড়ানো এবং নিজেদের সদস্যদের সংখ্যা জাহির করা।

আইডিএফ এর আগে অনুমান করেছিল যে ১,৫০০ যোদ্ধা ৭ অক্টোবরের অভিযানে অংশ নিয়েছিল। চলতি মাসের শুরুর দিকে টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইডিএফ এখন বিশ্বাস করে যে এই সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি।প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক না কেন, এর অর্থ গাজার মোট মুক্তিকামী কর্মীদের মধ্যে একটি ভাগ ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। হামলা বা স্ট্রং পিলার মহড়ায় ছোট ছোট দলের কতজন যোদ্ধা অংশ নিয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব নয়।

মিডল ইস্ট সেন্টার ফর স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও লেবাননের সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিশাম জাবের বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে কেবল হামাসই চূড়ান্ত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল এবং ‘সম্ভবত [তারা] অন্যান্য দলগুলোকে হামলার দিনে যোগ দিতে বলেছিল।’কিংস কলেজ লন্ডনের সিকিউরিটি স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আন্দ্রেস ক্রিগ বিবিসিকে বলেন, ‘পরিকল্পনাটি কেন্দ্রীয়ভাবে করা হলেও বাস্তবায়নের সময় তা সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। প্রতিটি স্কোয়াড যেভাবে সম্ভব তেমনভাবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করে।’

তিনি বলেন, হামাসের অভ্যন্তরের লোকজন ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা দেখে বিস্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে মুক্তিকামীরা সম্ভবত অফলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে ইসরাইলের নজরদারি প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে।ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক হিউ লোভাট বলেন, ইসরাইল এই যৌথ প্রশিক্ষণ মহড়া সম্পর্কে অবগত ছিল, কিন্তু ‘ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে’। কারণ তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আধাসামরিক গোষ্ঠীগুলোর সাধারণ কার্যকলাপের ‘নিরিখে’ বিচার করেছিল; ‘বৃহৎ আকারের আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে’ একথা ভেবে নয়।

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফে বলা হয়েছে যে, তারা বর্তমানে সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের হুমকি নির্মূল করার দিকে মনোনিবেশ করছে’ এবং কোনো সম্ভাব্য ব্যর্থতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জানানো হয়েছে ‘পরে খতিয়ে দেখা হবে’।ইসরাইল ৭ অক্টোবরের গণহত্যা প্রতিরোধের সুযোগ হাতছাড়া করেছে কিনা তা আনুষ্ঠানিকভাবে যাচাই করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু এর প্রভাব সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সররের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে।

সূত্র : বিবিসি