আত্মহত্যা রোধে কুরআনের নির্দেশনা

আত্মহত্যা রোধে কুরআনের নির্দেশনা

প্রতিকী ছবি।

অতিসম্প্রতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে, প্রতি দুই মিনিটে তিনজন মানুষ আত্মহত্যা করছেন।

আত্মহত্যা তথা নিজেকে হনন করা এ এক ঘৃণ্য এবং মহাপাপের কাজ। এত বড় পাপ হওয়া সত্ত্বেও অনেক দুরভাগা আছেন যারা জীবনযাপনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য আত্মহননের পথ বেছে নেন। ধৈর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে চললে এমন ভয়াবহ পথে পা বাড়াতে হয় না। যদি কেউ বুঝত আত্মহত্যার ভয়াবহতা কত কঠিন তাহলে কোনোভাবে এ পথে পা দিত না। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কর না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।

আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ২৯-৩০)। আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসে কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে। জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জখম হয়ে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম’ (বুখারি, হাদিস : ১২৭৫)।

আবু হুরায়রা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩৩)।

দুনিয়ায় আত্মহত্যাকারীর প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মায়। রাসূল (সা.) এসব পাপিষ্ঠ ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়েননি। জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছে, যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করেননি’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৪)।

পারিবারিক ও সামাজিক নানা সংকট থেকে মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়। চরম হতাশা, বিপদে অধৈর্য হয়ে আর অনিয়ন্ত্রিত জেদ-অভিমানই আত্মহত্যার মূল কয়েকটি কারণ। অথচ ইসলামে এ কারণগুলোর সান্ত্বনা ও প্রতিদানের কথা ঘোষিত রয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু’ (সূরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)।

সব বিষয়ে আল্লাহর রহমতই একমাত্র ভরসা। মনে রাখতে হবে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর কোনো সংকটই স্থায়ী হয় না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে’ (সূরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)। বিলাসিতা উচ্চ আকাক্সক্ষা ও অতিভোগকে মানুষ সফলতা মনে করে। এসব চাহিদা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। অথচ অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে সফলকাম হয়েছে (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৩৮)।

 

অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হলো যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)।

একবার রাসূল (সা.) আনসার সাহাবিদের কিছু লোককে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)। দুঃখ-দুর্দশা গ্লানি যত সংকট আসুক না কেন সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা তালাক, আয়াত : ৩)।

তাই জন্ম ও মৃত্যু মহান আল্লাহর হাতে। কেউ চাইলেও আগে বা পরে মারা যেতে পারবে না। সবাইকে মহান আল্লাহর হুকুমেই মারা যেতে হবে। তবে কখনো আত্মহত্যার মতো এমন মহাপাপের কথা কখনোই কল্পনায়ও আনা যাবে না। যত বড়ই মানসিক চাপ আসুক সর্বদা ধৈর্য ধরে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। তাই সৎকাজে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কর, কল্যাণগুলোকে যথাযথভাবে প্রাপ্ত হওয়ার জন্য। আর আল্লাহ সেই জাতির উন্নতি করেন না-যে নিজেই নিজের উন্নতি না করে।