ভোরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মাদ্রাসাছাত্রীকে খুন

ভোরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মাদ্রাসাছাত্রীকে খুন

ছবিঃ সংগৃহিত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভোররাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হোসনেয়ারা আক্তার (১৪) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই ছাত্রীর মা ও ভাই-বোনসহ চারজন আহত হয়েছেন। বুধবার ভোররাতে উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের নিমবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ওই মাদ্রাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত হোসনেয়ারা আক্তার কসবা উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের নিমবাড়ি গ্রামের নাছির মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় শ্যামবাড়ি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

আহতরা হলেন- নিহত হোসনেয়ারা আক্তারের মা নাদিরা বেগম, ছোট বোন ফাহিমা আক্তার (১২), ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম (৯) এবং নাহিদুল ইসলাম (৭)। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কসবা উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের নিমবাড়ি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দুপক্ষের বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে পরপর দুইটি খুন হয়েছে। দুটি মামলাই বিচারাধীন রয়েছে। নাছির মিয়া বাড়িতে নেই। গত মঙ্গলবার রাতে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। বুধবার ভোররাতে একদল দুর্বৃত্ত ঘরের দরজা ভেঙে নাছির মিয়ার ঘরে ঢুকে স্ত্রী ও মেয়ে হোসনেয়ারা আক্তারকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। তার মা নাদিরা বেগম বাধা দিতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করলে তার হাতে আঘাত লাগে। তারা আরও তিনজনকে মারধর করে।

এ সময় নাদিরা বেগম ও ঘরের লোকজন চিৎকার করতে থাকে। পরে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হোসনেয়ারা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। অন্য আহতদের চিকিৎসা চলছে।

নিহত হোসনেয়ারা আক্তারের মা কসবা হাসপাতালে বলেন, তিনি তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। বুধবার ভোরে ফজর নামাজের আগে ঘরের দরজা ভেঙে তিন-চারজন লোক ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। বেশ কয়েকজন লোক ঘরের বাহিরে থাকে। তাদের মধ্যে তিনজনকে চিনেছি।

তিনি বলেন, তাদের চিৎকার করে বলতে থাকি এটি আমার ছেলে নয়, আমার মেয়ে তোরা তাকে মারিস না। তারপরও ছুরিকাঘাত করতে থাকে। ওই সময় আমাকেও ছুরিকাঘাত করে। আমার হাত কেটে যায়। আমার একটি মেয়ে ও ছোট দুই ছেলেকেও এরা মারধর করেছে। আমি আমার মেয়ের খুনের বিচার চাই।

কসবা উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, রাতের আঁধারে নিমবাড়ি গ্রামের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়েছে। আমি ঢাকা যাচ্ছি এ কারণে সরেজমিন যেতে পারিনি।

কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. ইকরামউল্লাহ বলেন, হোসনেয়ারা নামের ওই ছাত্রী হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। তার মাথায় ছুরির কয়েকটি আঘাত রয়েছে। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে।

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

তিনি বলেন, নিমবাড়ি গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ওই গ্রামে আগেও দুটি খুন হয়েছিল। হোসনেয়ারাকে রাতের আঁধারে কে খুন করেছে কিংবা পূর্বের বিরোধের জন্য খুন হয়েছে কিনা- জেলা পুলিশসহ একাধিক বাহিনী তদন্ত করছে।