অসময়ে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র

অসময়ে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র

সংগৃহীত

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। বর্ষায় নদের পাড় ভাঙলেও এবার অসময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, হাট-বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, ১০ বছরে এই দুই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে জিল বাংলা সুগার মিল। বকশীগঞ্জের মাদারের চর থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে বিলীন হয়ে যাবে এসব এলাকার আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। অনবরত ভাঙছে নদের পাড়। শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু এবার ভাঙন শুরু হওয়ায় হতবাক স্থানীয়রা। দুই মাস ধরে চলা ভাঙনে নদের প্রায় ১ কিলোমিটার তীর বিলীন হয়ে গেছে। ভুট্টা, মরিচ, বাদামসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল আবাদ করা কয়েক শ হেক্টর জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। যতটুকু ফসল এখনো আছে, তা ঘরে তোলা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ঋণ নিয়ে ফসল চাষাবাদ করায় দেনা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। 

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, নূর হালিম, মালেকাসহ কয়েকজন জানান, শুষ্ক মৌসুমে তারা এমন ভাঙন এর আগে কখনো দেখেননি। ভাঙন অব্যাহত থাকলে হুমকিতে পড়বে কয়েক হাজার বাসিন্দার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসাসহ অন্যান্য স্থাপনা। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বর্ষায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেবে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বালির বস্তা, বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা করছেন। 

আলী একাব্বর, ইমরানসহ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বস্তায় বালি ভরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু এই উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসছে না। একদিকে বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা করলে অন্যদিকে শুরু হচ্ছে ভাঙন। তাই স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা। 

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ করা হবে। পাঁচ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে। 

তিনি আরও জানান, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙন রোধে ১৩.২৫৫ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। তখন এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।