বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে তিন মাসের কন্যা শিশুকে আছড়ে মারার অভিযোগ

বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে তিন মাসের কন্যা শিশুকে আছড়ে মারার অভিযোগ

প্রতীকী ছবি

নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সব কর্মসূচি, নতুন ঘোষণা এবং নানা ধরনের প্রকল্প যেন পেছনেই পড়ে আছে। এসবের কোনো কিছুই যেন মেয়েদের সুরক্ষায় সেভাবে কাজে আসছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালায় তিন মাসের এক কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ‘আছড়ে খুন’ করার অভিযোগে তার বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, কেরালায় কাজ করেন ভাতশালার বাসিন্দা রিন্টু শেখ। প্রায় তিন মাস আগে সে তার তৃতীয় কন্যাসন্তানের জন্মের খবর পায়। সপ্তাহখানেক আগে গ্রামে ফেরে ওই পরিযায়ী শ্রমিক। ফের মেয়ে হওয়ায় স্ত্রীকে উঠতে-বসতে খোঁটা দিত সে।

এরই মধ্যে গত রোববার ওই শিশুটির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির দাদু দবির শেখের অভিযোগ, তার ছেলে রিন্টু আছড়ে খুন করেছে ছোট নাতনিকে। এই ঘটনায় তার পুত্রবধূও জড়িত। দুজনের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ রিন্টু এবং তার স্ত্রী বেলুয়ারা বিবিকে রোববার দুপুরে আটক করে। ডোমকল থানার পুলিশের দাবি, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়ে তারা সন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করে নেন।

নারীর ক্ষমতায়নে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং রাজ্যে মমতা ব্যানার্জীর সরকার একগুচ্ছ প্রকল্প এনেছে। মেয়েদের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে কেন্দ্রের ‘বেটি বাচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প রয়েছে। সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারী জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সংসদে বিল পাশ হয়েছে। পিছিয়ে নেই রাজ্য সরকারও।

নারী উন্নয়নে তাদের ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প রয়েছে। বহু নারী স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে এ রাজ্যে। সেই গোষ্ঠীগুলোকে কাছে টানতে কেন্দ্রও সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু এসব প্রচারের সঙ্গে কন্যাসন্তান নিয়ে সচেতনতা কি নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে? বাস্তব যে অনেক ক্ষেত্রেই তা বলছে না, সেটা ডোমকলের ভাতশালার এই ঘটনায় আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল বলেই মনে করেন অনেকেই।

তাদের মতে, হয়তো একটি ঘটনা দিয়েই সরকারি প্রকল্পের সাফল্য বা ব্যর্থতা জরিপ করা অনুচিত। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই কন্যাসন্তানের প্রতি অনীহা, তাদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবহেলা জানান দেয় যে, সরকারি প্রকল্প ও প্রচার সত্ত্বেও এ বিষয়ে সচেতনতা এখনও সমাজের একটি বড় অংশের মধ্যেই অনুপস্থিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ বছর আগে রিন্টুর বিয়ে হয়েছিল ডোমকলের কামুড়দিয়াড়ের বাসিন্দা বেলুয়ারার সঙ্গে। চার বছর আগে তাদের প্রথম মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এর পরের সন্তানটিও মেয়ে হয়। তিন মাস আগে তৃতীয় বার কন্যা সন্তানের জন্ম দেন বেলুয়ারা। পড়শিদের একাংশের দাবি, দুই মেয়েকে নানা অজুহাতে মারধর করত রিন্টু। কিছুদিন আগে সে মেরে বড় মেয়ের হাত ভেঙে দিয়েছিল। বাবার হাতে মার খেয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিল তার মেজো মেয়েও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসের শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বাড়ির লোকজন দেখেন ঘরে লেপের নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সে। বেলুয়ারাকে চেপে ধরা হলে সে বলতে থাকে মেয়েকে খাটে শুইয়ে আমি দাওয়ায় রান্না করছিলাম। কী হয়েছে, জানি না। রিন্টুর বাবা দাবি করেছেন, তৃতীয় বার মেয়ে হওয়ার পর থেকে ছেলে আর বৌমার ঝামেলা লেগেই থাকত। ছেলে নিয়মিত নেশা করে। ছেলেই ছোট নাতনিকে খুন করেছে। পুত্রবধূ সব জেনেও ওকে আড়াল করছে।