হাইতিতে কারফিউ জারি

হাইতিতে কারফিউ জারি

সংগৃহীত

উত্তর আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ হাইতিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে ৪ হাজার বন্দী জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে এই কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সশস্ত্র গ্যাংগুলোর সহিংসতা বৃদ্ধি ও দেশটির বৃহৎ দুই কারাগার থেকে হাজার হাজার বন্দীর পালিয়ে যাওয়ার পরই হাইতির সরকার কারফিউ জারি করেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হত্যাকারী, অপহরণকারীসহ সহিংস অপরাধী এবং কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের খুঁজতেই ৭২ ঘণ্টার জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়েছে হাইতি সরকার।

দেশটির স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে।

এক বিবৃতিতে হাইতির অর্থমন্ত্রী প্যাট্রিক বোইসভের্ত বলেন, ‘কারফিউ কার্যকর ও সমস্ত অপরাধীদের গ্রেফতারে সমস্ত আইনি উপায় ব্যবহারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

অবস্থার প্রেক্ষিতে উভয় পদক্ষেপের মেয়াদ বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে গোপন নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাজধানীতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। শুরু হয়েছে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ।

জানা গেছে, হাইতির প্রধান জেলে রোববার আক্রমণ চালায় একটি গ্যাংয়ের সদস্যরা। ওই জেলে অন্তত তিন হাজার ৬৮৭ জন বন্দী ছিল বলে মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে। এখন জেলে আছে শ’ খানেক বন্দী। বাকিরা পালিয়েছে।

হামলাকারীরা জেলে আক্রমণ চালানোর পর পরাস্ত হয় জেলের গার্ড এবং পুলিশ। সংঘর্ষে অন্তত তিনজন বন্দী নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

ঘটনার পর দায় স্বীকার করেছেন হাইতির একটি শক্তিশালী গ্যাংয়ের প্রধান জিমি চেরিজিয়ার। এর আগে পুলিশ অফিসার ছিলেন তিনি। জিমি জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরিকে উৎখাত করা। ২০২১ সালে হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসি হত্যার শিকার হওয়ার পর থেকে হেনরি ক্ষমতায় আছেন।

উল্লেখ্য, এই পাহাড়ি দেশটি একসময় অরণ্যে আবৃত ছিল। বেশির ভাগ গাছই কেটে ফেলা হয়েছে, যার ফলে মৃত্তিকার ক্ষয় ঘটেছে। পল্লী অঞ্চলে কৃষকেরা পাহাড়ের পাদদেশে ক্ষুদ্রাকার জমিতে চাষবাস করে। অপুষ্টি ও বেকারত্ব হাইতির বড় সমস্যা।

সমগ্র ইতিহাস জুড়ে হাইতির জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে আছে ক্ষুদ্র একটি শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণী, যারা বেশির ভাগ সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে আছে বিশাল নিম্নবিত্ত শ্রেণী যাদের কোনো ক্ষমতা নেই। বর্তমানে হাইতি পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। অনেক হাইতীয় দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।

হাইতির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ইতিহাস দীর্ঘ। দেশটিতে অনেকগুলো স্বৈরশাসক শাসন করেছেন। এদের মধ্যে ফ্রঁসোয়া দুভালিয়ে-র নাম উল্লেখযোগ্য।

২১ শ’ শতকের প্রারম্ভে এসে হাইতি একটি গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
সূত্র : আল-জাজিরা ও উইকিপিডিয়া