সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের জন্য কাজ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের জন্য কাজ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের কাছে গিয়ে তাদের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তার সরকারের সব কর্মকাণ্ড দেশের মানুষের কল্যাণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে এই আহ্বান জানাব যে মানুষের পাশে যান মানুষের জন্য কাজ করেন।’

বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মিলন-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত নৈশভোজ অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা অতিমারীসহ সকল দুর্যোগেই আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন, দায়িত্ব কিন্তু এখনো রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে ততক্ষণ আপনাদের কাজগুলো করে যেতে হবে। সে জন্য আমি আপনাদের সকলকে এই আহ্বান জানাব যে মানুষের পাশে যান মানুষের জন্য কাজ করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় যেভাবে গণহত্যা চলছে তার প্রভাবটা অর্থনীতির ওপর পড়েছে। আমরা কিন্তু সেখান থেকে দূরে নই। কাজেই যে মূল্যস্ফীতির চাপটা আমাদের ওপর পড়ে গেছে তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাপী মন্দার এ প্রভাবে ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। কাজেই আমাদের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি হবে জনগণকে কেন্দ্র করে। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জ্ঞানভিত্তিক ও কল্যাণমুখী দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন আমরা গড়ে তুলতে চাই। যাতে জনগণ উন্নত এবং মানসম্মত সেবা পায়।’

‘তার সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই কাজটা আপনাদেরই করতে হবে। এবারে আমরা ঘোষণা দিয়েছি স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম সেটা আমরা করেছি। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কারণ সময় ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী জনগোষ্ঠী আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’

তার সরকার বিদেশে যে কর্মী প্রেরণ করে থাকে তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য যে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন হবে, স্মার্ট ইকনোমি হবে, স্মার্ট গভমেন্ট হবে এবং স্মার্ট সোসাইটি হবে। দেশকে আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। এই যাত্রাকে সফল করেই ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব এবং নিজের দেশকে গড়ে তুলব। প্রতিটি মানুষের জীবন আমরা পরিবর্তন করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা খুব স্পষ্ট। আমরা ইশতেহার দিয়েছি। আমরা কিন্তু এই নির্বাচনী ইশতেহার দেয়ার মধ্য দিয়ে অঙ্গীকার করে আসি। আর সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্যদিয়েই আজকের দেশটা কিন্তু বদলে গেছে। প্রতিটি বাজেটে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারটা অনুসরণ করতাম বলেই এই পরিবর্তনটা করতে পেরেছি। পাশাপাশি বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে সময় মতো এর সংযোজন পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে হয়, যেটা আমরা করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজকে সকল উচ্চপদে বাঙালিরা অবস্থান নিয়েছেন। আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা এখন পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে গেছি। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলা কম কথা নয় কিন্তু স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা আমাদের একটি সংবিধান দিয়ে যান। যে সংবিধানে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব দিক নির্দেশনা রয়েছে এবং সেই সংবিধানের ২১ এর (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘সকল সময় জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ সেখানে কিন্তু জনসেবার কথাটা বারবার বলা হয়েছে এবং জাতির পিতা শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিজেকেই জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীত্ব বড় কথা নয়, জনগণের সেবা করার সুযোপ পাওয়াটা, তাদের কল্যাণ করাটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী নয়, বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবেই বিবেচনা করি। যেন নির্বাচনটাই না হয়, এবারের নির্বাচনে তারা (বিএনপি) সেরকমই একটা অবস্থার সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। আমি জানি এই নির্বাচনটা নিয়ে অনেক চক্রান্ত, যে কারণে আমি নিজেও ঝুঁকি নিয়েছি। আপনারা জানেন সংসদীয় পদ্ধতির গণতন্ত্রে আমরা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারি তাহলেই কেবল সরকার গঠন করতে পারব। আর না হলে পারব না। তারপরেও নির্বাচন যেন গণমুখী হয়, মানুষ যেন স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসে এবং নির্বাচনটা যাতে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও জবাবদিহিমূলক হয় সেটা করার জন্য আমরা একদিকে যেমন আমাদের মনোনয়ন দিয়েছি আর একদিকে নির্বাচনটা আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আর এই নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে এবার পরিচালনা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি সংস্থাসহ সকলে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে আপনারা জনগণের ভোটের যে সাংবিধানিক অধিকার তার যেমন সুরক্ষা দিয়েছেন তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি আপনাদের যে দায়িত্ব কর্তব্য সেটাই পালন করেছেন। সেজন্য মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেছেন সকলকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের একটা ধারাবাহিকতা আছে যে কারণে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। সুফলটা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ এর সুফলটা পেলেও দেশের কিছু মানুষ আছে যাদের উন্নয়নটা বোধহয় পছন্দ হয় না । আবার তার ওপর কিছু বিদেশী প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাধীন দেশ, আমরা মুক্তভাবে চলব। আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলব।’

তিনি উন্নয়ন সহযোগীদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নেই ঋণ হিসেবে এবং তার সুদসহ তা আমরা ফেরত দেই। কিন্তু আমাদের দেশের উন্নয়নের কাজ আমরা যতটুকু বুঝব বাইরের কেউ এসে তা বুঝবে না। আমার দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, তাদের মানসিকতা, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করেই আমরা পরিকল্পনা নেব এবং তা বাস্তবায়ন করব। সেখানে আমরা খবরদারি শুনতে রাজি নই বরং আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই উন্নয়নের পরিকল্পনাটা করতে হবে। সেটাই আমার কথা।’
সূত্র : বাসস