জাবিতে প্রতিবাদী গণ-ইফতারের আয়োজন

জাবিতে প্রতিবাদী গণ-ইফতারের আয়োজন

সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রতিবাদ জানিয়ে গণ-ইফতারের আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৪৯ ব্যাচের উদ্যোগে এ গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। ইফতারে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল থেকেই আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে ইফতারের উদ্দেশ্যে আসতে থাকে। ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী তাদের কেউ প্লেট বিছিয়ে দিচ্ছেন। কেউ তাতে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু সাজিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ ব্যস্ত শরবত বানাতে। অন্যদিকে একদল শিক্ষার্থী আবাসিক হলগুলো থেকে আসা ছাত্রদের সারি সারি বসিয়ে দিচ্ছেন। আরেকদল ব্যস্ত বসে থাকা শিক্ষার্থীদের ইফতার সরবরাহে। এ সময় কুরআন তিলাওয়াত ও হামদ-নাত পরিবেশন করতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এক পর্যায়ে সময় ঘনিয়ে এলে সম্মিলিত মোনাজাত করেন শিক্ষার্থীরা। শেষে মসজিদের মাইকে আজানের পর ইফতার শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

আয়োজকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে প্রতিবাদস্বরূপ এই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই এর অর্থায়ন করেছেন। প্রাথমিকভাবে ৫০০ জনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু উপস্থিত ছিল প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীরা কেউ নিজ খরচে ইফতার কিনে এনেছেন আবার কেউ তাদের বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে ইফতার করেছেন।

ইফতার করতে এসে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এটি একটি নীরব প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদে শামিল হতে এখানে এসেছি।’

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বাঙালি মুসলমানের ঐতিহ্য ইফতার মাহফিল। নোবিপ্রবি ও শাবিপ্রবিতে ইফতার পার্টি নিষিদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই গণইফতার কর্মসূচি পালন করেছি। ইফতার মাহফিল বন্ধ করলে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি এই আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান করছি।’

আয়োজকদের পক্ষে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর বলেন, ‘দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের ইফতার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞায় এখান থেকে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণইফতার আয়োজন করায় কতিপয় দুষ্কৃতিকারী আলোচনা চলাকালে আয়োজকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা জাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয় ও এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যারা এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় এবং ইসলামের নামে কটূক্তি করে আমরা তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবি প্রশাসন ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ জারি করে। এতে দেশব্যাপী শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশাসনের এমন নির্দেশের নিন্দা জানান।