রাঙামাটিতে একই উপসর্গে পাঁচ জনের মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক

রাঙামাটিতে একই উপসর্গে পাঁচ জনের মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক

প্রতীকী ছবি

খাবারের পর হঠাৎ বমি। তার পর পেট ও মাথা ব্যথা। সাথে তীব্র জ্বর। এমন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের প্রথমে তিন জন এবং পরে অন্য আরেক পরিবারের দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। একই একই রকম উপসর্গে ভুগছেন আরো ১১জন। 

রাঙামাটির দুর্গম বরকল উপজেলার ভূষণছাড়া ইউনিয়নের শুইছড়ি মৌজার চান্দবিঘাট গ্রামের ঘটেছে এই ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এসব উপসর্গ দেখা দিলে নড়েচড়ে বসে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে ছয় সদস্যের একটি বিশেষ মেডিক্যাল দল। স্বাস্ব্য বিভাগের চিকিৎসকদের বিশেষ দল বলছে, খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত সবাই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূষণছাড়া ইউনিয়নের শুইছড়ির চান্দিনাঘাট গ্রামের বাসিন্দা লবিন্দর চাকমা এবং স্নেহবালা চাকমার ছেলে পত্ত রঞ্জন চাকমার (২৫)  প্রথমে বমি, পেটে ব্যথা দেখা দেয়। পরে বমি করতে শুরু করে। একপর্যায়ে বমির সাথে মুখ থেকে রক্ত বের হলে নিস্তেজ হয়ে মারা যায় সে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি বিমলেশ্বর চাকমা (৫৫), ২৬ ফেব্রুয়ারি ডালিম কুমার চাকমা (৩৫) ও গত ১৫ মার্চ চিত্তি মোহন চাকমা (৬০) ও সোনি চাকমা (৮ ) একইভাবে মৃত্যু বরণ করে।
 
অন্যদিকে একই উপসর্গে একই গ্রামের আরও ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খবর পেয়ে রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয় জনের একটি বিশেষ মেডিক্যাল দল ওই আক্রান্ত গ্রামে পৌঁছায়। পরে চিকিৎসা শুরু করে।

রাঙামাটি বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন কোনো আক্রান্তের খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
 
বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মং ক্যছিং সাগর বলেন, রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তারা কেন এ রোগে আক্রান্ত। এখনো রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে আমরা জ্বর, বমি, পেটব্যথা, শরীর ব্যথার কথা জানতে পেরেছি। আক্রান্তদের সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে।
 
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, এটা কোনো অজ্ঞাত রোগ নয়। আসলে অজ্ঞাত রোগ বলতে কিছু নেই। প্রযুক্তি অনেক উন্নত। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না করানোর কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এটি কোনো মহামারি না। সবাই একদিনে মারা যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে মারা গেছে। পাহাড়ে এখনো অনেক মানুষ সচেতন না। দুর্গম এলাকায় মানুষ এখনো অনেক খাবার খায় যা আসলে স্বাস্থ্যসমত না। তার জন্য খাদ্যজনিত রোগ হতে পারে। অতিরিক্ত বমি করলে রক্তবমি হতে পারে। এটা কোনো খারাপ রোগের লক্ষ্মণ না। যদি খারাপ কিছু হতো তাহলে তার পায়খানার রাস্তা দিয়েও রক্ত যেতো। তাই আশা করি চিকিৎসার পর বাকি আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে উঠবে।