মাহে রমজানে দান-সদকার অফুরন্ত ফজিলত

মাহে রমজানে দান-সদকার অফুরন্ত ফজিলত

ছবি: সংগৃহীত

মাহে রমজান দানশীলতার শ্রেষ্ঠ মাস। এই মাসে দান-সদকাসহ সবরকম নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এছাড়াও দান-সদকা দ্বারা সম্পদে বরকত হয়। বিপদ-আপদ দূর হয়। গরিব-দুঃখীর উপকার হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: ২৬১) শতাধিক আয়াত দান-খয়রাত সম্পর্কে অবতীর্ণ করেছেন মহান আল্লাহ। সুরা তাওবায় এসেছে, ‘হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তাওবা: ১০৩)

প্রিয়নবী (স.)-এর জীবনের মহিমান্বিত অভ্যাস ছিল উদারচিত্তে দান করা। রমজান এলে তা আরও বৃদ্ধি পেত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত; যখন জিব্রাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (স.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারি: ০৬; মুসলিম: ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ: ২৬১৬)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উঁচুতে তুলে দেন।’ (মুসলিম: ৬৩৫৬)

গরিব-দুঃখিদের ইফতার ও সেহেরির জন্য সাহায্য করা অনেক বড় ইবাদত এবং এর বিস্ময়কর ফজিলত রয়েছে। জায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন— ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে; তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি: ৮০৭)

গোপন দানকারী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। (বুখারি: ৬৬০)

তাছাড়া দান-সদকা রিজিকে বরকত এনে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। ’ (সুরা ফাতির: ২৯-৩০)

কাজেই পবিত্র মাস রমজানে অসহায় ও দরিদ্রদের খুঁজে খুঁজে বের করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা ও তাদের প্রাপ্য আদায় করা বাঞ্ছনীয়। এতে আল্লাহর হুকুম পালন করার এবং রমজানের বদৌলতে অধিক নেকি পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই পবিত্র রমজানে বেশি বেশি দান-সদকা করার সামর্থ্য ও তাওফিক দান করুন। আমিন।