গর্ভবতী মায়েদের ডায়াবেটিস মেলাইটাস

গর্ভবতী মায়েদের  ডায়াবেটিস মেলাইটাস

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

গর্ভকালীন যে ডায়াবেটিস হয় তাকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস বা প্রেগনান্সি ডিপেনডেন্স ডায়বেটিস বলে। ডায়াবেটিস  আরো কয়েক রকম আছে, যেমন জুভেনাইল ডায়বেটিস এটি শিশু বয়স  থেকে হতে পারে। এদের প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল নষ্ট  হয়ে যায় ফলে ইনসুলিন শরীরে তৈরি হয়না। বাইরে থেকে ইনসুলিন দিতে হয়। আরেক প্রকারের আছে ম্যাচুরিটি অনসেট ডায়বেটিস । মানুষের বয়স যখন বাড়ে বিশেষত ৪০ বছরের কাছাকাছি সময় হয় তখন এটি হয়। এই ধরনের ডায়বেটিস কিছুটা বংশগত। গর্ভকালে যে ডায়বেটিস হয় গর্ভের সময় প্রথম সনাক্ত হয়। গর্ভের পুর্বে ও পরে তাদের কোন লক্ষণ থাকে না। এই ধরনের ডায়বেটিসকে বলা হয় প্রেগনেন্সি ডায়েবিটিস বা জেস্টেশনাল ডায়বেটিস ম্যালাইটাস।

কোন ধরনের নারীদের হওয়ার বেশি সুযোগ আছে এই জেস্টেশনাল ডায়বেটিস?                                                               

যারা ওবেজ বা স্থুল মানে ওজন বেশি যাদের। যাদের বাচ্চা জন্মের সময় বেশি ওজন নিয়ে জন্মায়। আমাদের দেশের বাচ্চারা মোটামুটি আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন নিয়ে জন্মগ্রহন করে। বাচ্চার ওজন যদি সাড়ে তিন অথবা চার কেজি হয় তখন ডায়বেটিস সন্দেহ করা হয়। ঐ গর্ভবতী মা ডায়বেটিসে আক্রান্ত।

  • যাদের ডেলিভারির সময় মরা বাচ্চা হয়।
  • যাদের বাচ্চা বড় থাকার জন্য কষ্টকর প্রসব হয়।
  • যাদের বার বার প্রস্রাবের নালীতে প্রদাহ হয়।
  • যাদের যোনীপথে বার বার চুলকানি হয়, সাথে সাদা স্রাব যায় ( মনিলিয়াল ভ্যাজাইনাইটিস) তাদের ডায়বেটিস আছে অথবা হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

ডায়বেটিস থাকলে সে কি গর্ভধারণ করতে পারবে ?

তাকে অবশ্যই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে এনে তারপর বাচ্চা নিতে পারবে। সেইজন্য যদি কারো ডায়বেটিস থাকে তাকে প্রি কাউন্সিলিংয়ে যেতে হবে। মানে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ  নিয়ে তারপর প্রেগনান্সি নেবে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ না করে গর্ভবতী  হলে তার প্রথম তিন মাসের মধ্য বাচ্চা জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। তাছাড়া প্রেগনান্সি না ও হতে পারে।

ডায়বেটিস সনাক্ত কিভাবে করবে ?

ফাস্টিং বা না খেয়ে রক্ত পরীক্ষা। খাওয়ার দুই-ঘন্টা পর রক্ত পরিক্ষা। সন্দেহ জনক হলে গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট। 

ডায়বেটিস  মায়েদের  গর্ভকালীন  পরিচর্যা কেমন হবে ?

স্বাভাবিক গর্ভবতীর নিয়মেই পরিচর্যা হবে। তবে কোন কোন ক্ষেত্র বিশেষ আরো ঘনঘন ভিজিট দেয়া লাগতে পারে। প্রত্যেক চেকআপে তাকে ব্লাড সুগার চেক,  প্রেসার চেক-আপ, তার প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে কি না এজন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হবে। বাচ্চা ও তার মাকে মনিটর করতে হবে। তার ওজন কেমন বাড়ছে,  ফান্ডাল হাইট মানে  বাচ্চা ঠিকমত জরায়ুর মধ্যে বাড়ছে কিনা। বাচ্চার  ওজন, তার হার্ট  বিট দেখতে হবে। তাদের খাবার মোটামুটি  ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরির মধ্যে  দিতে হবে। তার ৫০% শর্করা বাঁকি অর্ধেক প্রটিন ও চর্বি জাতীয় খাবার দিতে হবে। সাথে শাক সবজি, ভিটামিন যুক্ত খাবার দিতে হবে। তাদের লৌহ জাতীয় খাবার ক্যাপসুল আকারে দিতে হবে। সাথে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম চলবে যথারীতি। ডায়বেটিস সনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাদের ইনসুলিন  দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তা নাহলে বাচ্চার উপর ইফেক্ট পড়বে । জন্মগত ক্রটি হতে পারে। তাছাড়া ইনসুলিন গর্ভফুল ক্রস করতে পারেনা। তাছাড়া ডায়বেটিস সুদক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ডায়বেটিস মায়েদের ৩৬ সপ্তাহে ভর্তি  হওয়ার পরামর্শ  দিতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকলে শেষের দিকে বাচ্চা ডেলিভারির আগেই পেটের মধ্যে  মারা যেতে  পারে।

ডায়বেটিস প্রেগনানসিতে কি কি অসুবিধা হয় ?

  • বন্ধ্যাত্ব বাচ্চা না-হওয়া।
  • বার-বার এবোরশন বা গর্ভপাত। 
  • অবাত্তি বাচ্চা প্রসব।
  • প্রি একালামসিয়া।
  • পানিঠুসিতে অতিরিক্ত পানি জমা।
  • প্রসবের সময় বড় বাচ্চার জন্ম দেয়ার জন্য ইনজুরি হতে পারে।
  • পোস্ট পারটাম বা প্রসব পরবর্তী রক্ত ক্ষরণ।
  • প্রসব পরবর্তী ইনফেকশন। 
  • তুলনামূলকভাবে বাচ্চা বড় হওয়া।
  • বাচ্চার শ্বাসকষ্ট।
  • বাচ্চার মৃত্যু।

গর্ভবতীদের ডায়বেটিস চিকিৎসা: 

গর্ভবতীদের চিকিৎসা নির্ভর করে ব্লাড সুগারের  উপর। যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে ডায়েট ও এক্সারসাইজ করতে হবে। সেসব প্রেগন্যান্সি ডেট পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। তারপর না হলে সুবিধামত ডেলিভারি করতে হবে। তবে স্বাভাবিক ডেলিভারি এক্ষেত্রে বেশি ভাল। কারণ ইনফেকশন বেশি হতে পারে।

আর যারা ইনসুলিন দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখে তাদের ৩৭ সপ্তাহ হলেই ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে বাচ্চা পেটে মারা যেতে পারে।

ডায়বেটিস রোগীদের বাচ্চা ডেলিভারির সময় বাচ্চার নাড়ী লম্বা করে কাটতে হবে (৭ থেকে ১০ সেমি)।  অবাত্তি বাচ্চাকে সাথে সাথে  ইনকিউবেটরে রাখতে হবে।

আধা ঘন্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ  খাওয়াতে হবে। শিশুর ব্লাড সুগার একঘন্টার মধ্য করতে হবে। তাছাড়া শিশুর রক্তে সুগার  কমে হাইপোগ্লাইসিমা হতে পারে। এই ডায়বেটিস শিশুদের নানা সমস্যা  হয়ে থাকে। সেদিকেও  নজর রাখতে হবে।