সিকান্দারের গাড়ি বিলাস

সিকান্দারের গাড়ি বিলাস

সিকান্দার আবু জাফর।

খালেদ ইকবাল

১৯৪৭ এর পূর্বে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি ঘটেছে বৃটিশ ভারতের তৎকালীন রাজধানি কোলকাতায়। পূর্ব বাংলার যেসকল শিক্ষিতজন কোলকাতায় উচ্চ শিক্ষা লাভের পর সেখানেই তাদের জীবনের সমৃদ্ধি ঘটান, সেসব ব্যাক্তির  মধ্যে কবি সিকান্দার আবু জাফর  (১৯১৯-১৯৭৫) অন্যতম। 

নিজ জেলা সাতক্ষীরা থেকে প্রবেশিকা পাশের পর তিনি কোলকাতায় পাড়ি জমান। সেখানে সরকারী চাকুরী গ্রহণ করেন। চাকুরির পাশাপাশি লেখালেখির মাধ্যমে তাঁর নাম জস ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। দেশ ভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও বাঙ্গালী সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তাঁর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনা সম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন।
 
সিকান্দার আবু জাফরের এক বন্ধুর গন্ধতেলের দোকান ছিল। গন্ধতেলে বেশকিছু লাভ হওয়ায় সিকান্দারের চাপে পড়ে সে বন্ধু মাত্র চারশ টাকায় একটি সেকেন্ড হ্যান্ড বেবী অস্টিন কিনেছিলেন। ইংল্যন্ডের তৈরী ছোট আকারের আস্টিন-৭ মডেলের কারকে ”বেবী আস্টিন” বলা হত।

যা হোক গাড়িটা কেনার পর চলতে চলতে প্রায়ই থেমে যেত। একবার শিয়ালদার কাছে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলো। সিকান্দারের মাথায় হাত। কি করে তিনি মাঝ রাস্তা থেকে গাড়িটি টেনে গ্যারেজে নিয়ে যাবেন। কোন কুল কিনারা না পেয়ে অগ্যত একটা গরুর গাড়ির ব্যবস্থা হল। কবি গরুর গাড়ির পেছনে অস্টিনটি দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলেন, আর নিজে গরুর গাড়িতে বসে অচল অস্টিনটি টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। এই দৃশ্য দেখতে রাস্তার দুপাশে ভিড় জমে গিয়েছিল। যাহোক ঔভাবে গাড়িটি তিনি গ্যারেজ পর্যন্ত নিয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত গাড়িটির চরম দূরবস্থা সিকান্দারের নিজের হাতেই ঘটেছিল। গ্যারেজে গাড়িটি ফেলে না রেখে বাড়িতে নিয়ে নিজেই সেটার মেরামতের ভার নিলেন।  নাট-বল্টু ইঞ্জিন সব কিছু খুলে নিয়ে তিনি গাড়ি সারতে বসলেন ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত যন্ত্রপাতি ঠিকটাক জায়গায় আর বসাতে পারলেন না। নিবিষ্ট মনে খুলে রাখা যন্ত্রপাতির সামনে তাকিয়ে থাকলেন।  ভাবলেন কবিতায় শব্দের সংযোগ আর গাড়ীতে নাট-বল্টুর সংযোগ এক নয়।