“মানসিক অসুস্থতাকে নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে হবে”

“মানসিক অসুস্থতাকে নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে হবে”

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে পাবনা মানসিক হাসপাতালে আলোচনা সভা

‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য, অধিক বিনিয়োগ অবাধ সুযোগ’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। 

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সম্মেলন কক্ষে শনিবার আলোচনা সভায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন কুমার  রায়ের সভাপতিত্বে ঘোষিত প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক মানসিক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. ড. তম্ময় প্রকাশ বিশ্বাস, বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাকফাত ওয়াহিদ, মানসিক হাসপাতালের মাসুদ রানা সরকার, সাইয়াট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার মকবুল হোসেন পাশা প্রমূখ।

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আলোকচিত্র উপস্থাপন করেন মানসিক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল আজম জিকো।

প্রধান অতিথি ডা. ড. তম্ময় প্রকাশ বিশ্বাস দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন,“ আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের জনগণ মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আজো সচেতন নয়। ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে মানসিক রোগীর হার বেড়েই চলেছে। এছাড়াও  প্রয়োজন মাফিক মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে ব্যাপক।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন কুমার রায় তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর ১০ লক্ষ জনের মধ্যে ৬ জন আত্মহত্যা করে। অতএব মানসিক-অসুস্থতা, বেঁচে থাকা, ভালো থাকা, কর্মক্ষমা থাকা-জীবনের এ তিনটি দিককেই বিঘিœত করে। অথচ এদেশে যারা মানসিক অসুস্থায় ভুগেন; তাদের ৯০% জন মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পান না। মানসিক অসুস্থতাকে নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার বিদ্যমান। এজন্য অনেকে বিদ্যমান মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকেও গ্রহণ করতে চান না। এ ভুল ধারণা দূও করতে হবে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি এবং সুস্থ্য সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো হল মানসিক স্বাস্থ্যেও সামাজিক দিকটিকে জোরদার করার উপায়। এসব মানসিক অসুস্থার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তিনি  তৃণমূল মানসিক স্বাস্থ্য সেবার পরিধিকে বিস্তৃতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, শারীরিক চিকিৎসার বিলম্বিত হলে এবং রোগ ভোগ দীর্ঘায়িত হলে তা থেকে মানসিক রোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। মানসিক রোগ মানুষের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে। তাই বক্তারা যেকোন শারীরিক অসুস্থার দ্রুত ও প্রয়োজনে অব্যাহত চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে সকলকে সচেতনতার উপর  গুরুত্বারোপ করেন। 

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতাল চত্বর থেকে একটি র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি হাসপাতালের বিশাল চত্বর প্রদক্ষিণ করে। 

অন্যান্য বক্তারা মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট রোগের ডাক্তার নিয়োগের উপর গুরুত্বারোপ  করেন। 

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ওমর ফারুক বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আবাসিক কর্মকর্তা ডা. আরমিলা আক্তার ঝুমি, ডা. ইবনে মুরাদ, ডা. ফারজানা আখতার, ডা. রাকিব হাসান হৃদয় ডা. মিজান আহমেদ প্রমূখ।

উল্লেখ্য, বিশ্বে মানসিক রোগ বৃদ্ধি পাবার কারনে মানুষের মাঝে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। সে থেকে বিশ্বের একশ’ ৫০টি দেশ একই দিনে দিবসটি পালন করে আসছে।