স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের পেশাগত কারণে ব্যথা ও তা প্রতিরোধে করণীয়

স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের পেশাগত কারণে ব্যথা ও তা প্রতিরোধে করণীয়

মেহেরুন নেসা

বর্তমানে মেকানিকাল ব্যথার রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছ। শারীরিক অক্ষমতার একটি বড় কারণ হিসেবে এই মেকানিকাল ব্যথাকে গণ্য করা হয়। স্বাস্থ্য পেশাজীবীরাও এই সংখ্যা থেকে বাদ পড়েন নি। পেশাগত কারণে স্বাস্থ্যপেশাজীবীদের মধ্যে অস্থিসন্ধির ব্যথা দিনে দিনে মারাত্বক রুপ নিচ্ছে। বিশেষ করে নার্সদের মধ্যে কোমর ব্যথা ও কাঁধ ব্যথার প্রবণতা বেশি। প্রতি বছর ৬-১১% স্বাস্থ্যপেশাজীবী  ব্যথার কারণে তাদের চাকুরী পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের দেশে এই সংখ্যা অনেক বেশি। তাই কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পেশাজীবীদেরও নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন।

  • স্বাস্থ্য পেশাজীবী কারাঃ
  •  ফিজিশিয়ান
  • ডেন্টিস্ট
  • ফিজিওথেরাপিস্ট
  • নার্স
  • মেডিকাল টেকনোলোজিস্ট
  • মাঠ পর্যায়ের সাস্থ্যকর্মী
  • ব্যথার কারণঃ
  • রোগী ম্যানুয়ালি হ্যান্ডেলিং এর ফলে
  • দীর্ঘক্ষণ একই পজিশনে থাকার ফলে
  • ভুল পজিশন বা দেহের ভুল অঙ্গভঙ্গির এর ফলে
  • একই কাজ বারবার করার জন্য অতিরিক্ত ঘর্ষণের ফলে
  • মাংসপেশির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে
  • আঘাত প্রতিরোধে অপর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং এর ফলে
  • অতিরিক্ত কাজের চাপ (প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রোগী হ্যান্ডলিং এর ফলে)
  • শারীরিজ ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত ভারী কাজ করলে
  • যে সকল সমস্যা তৈরি হয়
  •  কোমর ব্যথা (৩০-৬০%) প্রতি ২জনে ১জন স্বাস্থ্যপেশাজীবী এর)
  • ঘাড় ব্যথা (টেনশন নেক মিনড্রোম (৪০%)
  • সারভাইকাল স্পাণ্ডেলাইসিসঃ ঘাড় ব্যথা, ঘাড়ের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, অবশ বোধ হওয়া, ব্যথা হাত পর্যন্ত ছড়াতে পারে, মাথা ব্যথা বিশেষ করে মাথার পেছনের অংশ।
  • কাধে ব্যথা (৪৭%)ঃ সোল্ডার টেণ্ডোনাইটিস, বারসাইটিস, ইমপিঞ্জমেন্ট সিড্রোম
  • থোরাসিক আউটলেট সিন্ড্রোমঃ ঘাড় ও কাঁধ ব্যথা, অবশ অবশ বোধ হওয়া, আঙ্গুলে মনে হয় সুচ ফুড়ে আছে এমন ব্যথা, হাত মুঠ করতে দুর্বল বোধ করা
  • ফ্রোজেন সোল্ডার
  • কনুই ব্যথাঃ টেনিস এলবো, গলফারস এলবো।
  • ডি কোয়ারভেন্স ডিভিজ
  • টেনোসাইনোভিটিস
  • কারপাল টানেল সিন্ড্রোমঃ কব্জী ব্যথা, অবশ অবশ লাগা
  • পা ফুলে যাওয়া
  • ভেরিকস ভেইন
  • লেগ ক্রাম্পস বা পায়ে রগ টান লাগা
  • প্রতিরোধে করণীয়ঃ
  • হাসপাতালে রোগী ম্যানুয়াল হ্যান্ডেলিং এর পাশাপাশি সহযোগী যন্ত্রাংশের ব্যবহার করতে হবে
  • দীর্ঘক্ষণ একই পজিশনে না থেকে কিছুক্ষণের জন্য পজিশন পরিবর্তন করতে হবে।
  • শরীরের সঠিক অঙ্গভঙ্গি বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
  • আঘাত প্রতিরোধে করণীয়তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • স্বাস্থ্যপেশাজীবীদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
  • প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
  • নিয়মিত কিছু ব্যয়াম করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং ঘুমাতে হবে।
  • কিছু ব্যয়ামঃ

কোমর স্ট্রেচিংঃ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কোমরের পেছনে রেখে যতটুকু সম্ভব পেছনে দিকে বাঁকতে হবে( অনেকটা ধনুকের মতো) ৫ সেকেন্ড এভাবে থেকে সোজা হতে হবে। এটি প্রতি ২ঘন্টা কাজের ফাকে ফাকে ৩-৫ বার করলেই যথেষ্ট।

ঘাড় স্ট্রেচিংঃ ঘাড় ডানে বায়ে, সামনে পেছনে হেলিয়ে টানটান করে ৫ সেকেন্ড করে ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। এটি প্রতি ২ঘন্টা  পরপর ৫বার করুন।

কবজির ব্যয়ামঃ দুই হাত সোজা করে শক্ত করে মুষ্টি বন্ধ করুন, ৫ সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন। এর ফলে কবজি ও হাতের আঙ্গুলের ব্যথা কমবে।

অ্যাঙ্কেল সার্কেলঃ চেয়ারে বসে প্রতি ১-২ঘন্টা পরপর পায়ের পাতা সামনে পেছনে এবং পায়ের গোড়ালি চতুর্দিকে ঘুড়ান ১০ সেকেন্ড।

 

 

মেহেরুন নেসা

ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ