মৃত্যুর পর প্রাণীদের আত্মা কোথায় যায়?

মৃত্যুর পর প্রাণীদের আত্মা কোথায় যায়?

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা আছে। তবে প্রাণী, পশু-পাখির মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে স্পষ্ট তেমন কিছু না থাকলেও কিয়ামতের ময়দান এবং এরপরে তাদের অবস্থান নিয়ে হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

মানুষের মতো পশু-পাখিদেরও কিয়ামতের দিন একত্রিত করা হবে এবং শেষ বিচারের পর তারা মাটিতে পরিণত হবে। অর্থাৎ, প্রাণীও আল্লাহর সৃষ্টি। তারা মৃত্যুর পর বিলুপ্ত হয় না, বরং ন্যায়বিচারের জন্য পুনরায় উপস্থিত হবে। মানুষ যেমন চূড়ান্ত বিচারে পুরস্কার বা শাস্তি পাবে, তেমনি প্রাণীরাও তাদের হক পাবে। এরপর তারা মাটিতে মিশে যাবে। 

বারযখে অবস্থান

ইসলামী ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মানুষের মতো সব প্রাণী মৃত্যুর পর বারযখে অবস্থান করে। বারযখ বলতে বোঝায় মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্যবর্তী এক অদৃশ্য জগৎ, যেখানে আত্মা চূড়ান্ত হিসাবের আগ পর্যন্ত অবস্থান করে। অর্থাৎ প্রাণীরাও এই বারযখে থাকবে যতক্ষণ না আল্লাহ তাদের কিয়ামতের দিনে পুনরুত্থিত করেন।

কোরআনে প্রাণীদের মৃত্যু পরবর্তী অবস্থান

পবিত্র কোরআনের সূরা তাকভিরে আল্লাহ বলেন, আর যখন বন্য প্রাণীগুলোকে একত্র করা হবে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরকার ইবনে কাসির ব্যাখ্যা করেন, এর অর্থ হলো—সব প্রাণীকে একত্র করে কিয়ামতের ময়দানে আনা হবে। 

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণী এবং আকাশে উড়ন্ত সকল পাখি তোমাদেরই মতো এক একটি জাতি বা সম্প্রদায়। আল্লাহ তাদের সৃষ্টিতে কোনো কিছু বাদ দেননি এবং তাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত তার কাছেই একত্রিত করা হবে। (সুরা আনআম, আয়াত : ৩৮)

ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, এমনকি মাছি পর্যন্ত কিয়ামতের ময়দানে হাজির হবে। আল্লাহ তখন তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করবেন—যে প্রাণী অন্যকে কষ্ট দিয়েছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এরপর বিচার শেষে তারা সবাই মাটিতে পরিণত হবে।

হাদিসে প্রাণীদের মৃত্যু পরবর্তী অবস্থান

এক হাদিসে রাসুল (সা) বলেছেন, ‘শিংবিশিষ্ট কোন ছাগল যদি শিংহীন কোন ছাগলের উপর জুলুম করে থাকে, তাহলে কিয়ামতের দিন শিংবিশিষ্ট ছাগলের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। (মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন প্রাণীদের মধ্যে বিচার শেষ হবে, তখন আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা মাটি হয়ে যাও। অনুরূপভাবে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ আছে, আল্লাহ পশু-পাখিদের উদ্দেশে বলবেন, তোমরা মাটি হয়ে যাও। এ সময়ই কাফেররা আক্ষেপ করে বলবে, আফসোস আমিও যদি মাটি হয়ে যেতাম এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে যেতাম।

অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের জন্য প্রাণীরা কিয়ামতের ময়দানে একত্রিত হবে, কিন্তু বিচারের পর তারা জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে না—বরং সবাই মাটিতে মিশে যাবে।

কাতাদা (রহ.) বলেন, এই সমস্ত সৃষ্টিজীব কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, তারপর আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে যা ইচ্ছা তাই সিদ্ধান্ত দেবেন।

প্রাণীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা যাবে?

প্রাণীর মৃত্যুতে কান্না বা শোক প্রকাশের বিষয়ে ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তবে প্রাণীর জন্য শোক প্রকাশের বিষয়টি অতিরিক্ত বিলাপ বা অসন্তোষে রূপ নেওয়া উচিত নয়। আর অতিরিক্ত ব্যথা বা সময় নষ্ট করে শোক পালন থেকে বিরত থাকা উত্তম।

তবে একজন মুসলমানের উচিত এসব বিষয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ না দিয়ে নিজের ঈমান ও আমল সংশোধনে ব্যস্ত থাকা। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এমন সব কাজে মনোযোগ দেওয়া যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। কারণ জান্নাতে প্রবেশের পর যে সুখ ও শান্তি পাওয়া যাবে, তা দুনিয়ার সব ছোটখাটো আকাঙ্ক্ষার চেয়ে বহু গুণ বেশি হবে।