যশোরের বিষমুক্ত নিরাপদ করলা সবজি যাচ্ছে বিদেশে

যশোরের বিষমুক্ত নিরাপদ করলা সবজি যাচ্ছে বিদেশে

যশোরের বিষমুক্ত নিরাপদ করলা সবজি যাচ্ছে বিদেশে

দিগন্ত জোড়া সবুজ করোলা ক্ষেত দেখে যে কোন মানুষেরই চোখ জুড়িয়ে যাবে। মাচার উপর সবুজ গাছে ছোট ছোট হলুদ ফুল থেকে ফলছে করোলা সবজি। এটি যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা এলাকার কোদালিয়া এবং নোঙ্গরপুর গ্রামের চিত্র। যশোর-ঢাকা মহাসড়ক ধরে গেলেই চোখে পড়বে এই দৃশ্য। এখানে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত করলা। এছাড়া পটল ও বেগুন চাষ হচ্ছে এখানে।

এলাকার প্রায় ৫শ’ কৃষক ৩শ ২০ বিঘা বা ৪০ হেক্টর জমিতে এই বিষমুক্ত বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। যার মধ্যে লেবুতলায় ২শ’ ৫৬ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত নিরাপদ করলা। এখানকার মাটি উঁচু এবং বেলে দোয়াশ হওয়ায় এসব সবজি চাষে দারুন উপযোগী। রাস্তার পাশে মাচার নিচে উকি দিলে দেখা যাবে ডগায় ডগায় ঝুলছে বড় বড় করলা। এসব সবজি সংগ্রহ করে কৃষক স্থানীয় বাজার এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন।

 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প- আইপিএম’ এর আওতায় এই এলাকার মাঠে সবজি চাষ করছেন চাষিরা। নিরাপদ হওয়ায় ১শ’ কেজি করলা পাঠানো হয়েছে ব্রুনাইয়ে এবং আরো ৪০ কেজি গেছে মধ্যপ্রাচ্যে। সবজি বিক্রি করে ভাল দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।

স্থানীয় নোঙ্গরপুর গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ, আখতার হোসেন এবং কোদালিয়া গ্রামের মো: সেলিম রেজার সাথে কথা বললে তারা জানান, মন প্রতি ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা দরে পাইকারি করলা বিক্রি করছেন তারা। তবে সার প্রাপ্তিতে তাদের কিছুটা অসুবিধা রয়েছে বলে জানালেন। 

কৃষি বিভাগের পাশাপাশি করলা উৎপাদনে জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ ও প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শসহ বিভিন্ন ভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আদ্-দ্বীনসহ বেশ কয়েকটি এনজিও। আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার খাজুরা শাখা অফিস এই এলাকার প্রায় ১শ’ জন চাষীকে বিভিন্ন কৃষি সহায়তা প্রদান করেছে।

এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অ লে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ মেট্রিকটন করলা সরবরাহ করেছেন প্রকল্পভুক্ত চাষিরা। তবে, নিরাপদ এই সবজি বিক্রির জন্য উপযুক্ত কোনো বাজার নেই তাদের। এজন্য সবজি প্রসেসিং এবং বাজারজাত সুবিধার্থে হিমাগার এবং শেড নির্মানের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। 

ক্ষেত থেকে সবজি তুলে স্থানীয় কোদালিয়া বাজারে কৃষি বিভাগ নির্মিত নিরাপদ সবজি বিক্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়। সেখানে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে গ্রেডিং করে ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। গ্রেডিং কাজ করে স্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া সবজি ক্ষেত পরিচর্যা এবং সবজি তোলার কাজ করছেন অনেক শ্রমিক। বিক্রয় কেন্দ্র থেকেই দুর দুরান্তের ব্যবসায়ীরা সবজি সংগ্রহ করতে আসছেন।

যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: মাহাবুবুল আলম জানিয়েছেন, সারাদেশে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০টি মডেল ইউনিয়নের মধ্যে স্বীকৃত লেবুতলা ইউনিয়ন একটি। এখানে ৫শ’ জন সুবিধাভোগী কৃষককে ২০টি গ্রুপে ভাগ করে এই প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করে সুফল পেয়েছেন।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বায়োলিড, ফেরোমন ফাঁদ, জৈব সারসহ প্রত্যেক গ্রুপে একটি করে ব্যাটারি চালিত ভ্যানসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। ব্রুনাই, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানী হয়ে থাকে। বর্তমানে ইউরোপের বাজারে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।