টাইটানিকের কাছে কিভাবে বিধ্বস্ত হলো টাইটান!

টাইটানিকের কাছে কিভাবে বিধ্বস্ত হলো টাইটান!

সংগৃহীত

ঠিক কী হয়েছিল মিনি সাবমেরিন তথা ডুবোযান টাইটানের, তা নিয়েই এখন কাটাছেঁড়া চলছে। সাথে বাড়ছে রহস্যও। আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরে পাওয়া গেছে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলরক্ষী বাহিনীর দাবি, সমুদ্রের গভীরে একেবারে ‘দুমড়ে মুচড়ে’ গেছে ডুবোযানটি। ২২ ফুটের ডুবোযানটির পাঁচটি টুকরো হয়ে গেছে। সেগুলোরও খোঁজ মিলেছে। কিন্তু পাঁচ অভিযাত্রীর লাশের কোনো সন্ধান মেলেনি। তাদের লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনাও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে বলেও জানিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী।

ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিংয়ের ইনস্টগ্রাম পোস্টকে উদ্ধৃত করে আমেরিকার উরপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, গত ১৮ জুন গ্রিনিচ সময় অনুযায়ী (জিএমটি) দুপুর ১২টা নাগাদ পাঁচ অভিযাত্রীকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে নেমেছিল টাইটান। সমুদ্রের উপরে থাকা সহযোগী জাহাজ ‘পোলার প্রিন্স’কে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর সিগন্যাল পাঠানোর কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু দুপুর পৌনে ২টা নাগাদ টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে টাইটানের ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাইটান না ফেরায় আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে খবর পৌঁছয়।

২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টাইটানের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা টাইটানের খোঁজে নামে। সমুদ্রের ৪০০০ মিটার গভীরে শব্দ নিরীক্ষণ যন্ত্র পাঠানো হয়। সিএনএন এবং রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে ৩০ মিনিট অন্তর বেশ কয়েকটি জোরাল শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কোথা থেকে শব্দ আসছিল সেটি চিহ্নিত করে ২১ জুন দূরনিয়ন্ত্রিত একটি সমুদ্রযানকে পানির গভীরে পাঠানো হয়। ৯৬ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন ছিল টাইটানে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তিন দিন কেটে গিয়েছিল, ফলে অক্সিজেনের পরিমাণও কমছিল। তাই দ্রুত উদ্ধারের জন্য আরো দু’টি দূরনিয়ন্ত্রিত সমুদ্রযান পাঠানো হয়। কিন্তু তখনো কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি টাইটানের। ২২ জুন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে জোরালো শব্দ চিহ্নিত করা গিয়েছিল, ওই সময়েই কিছু একটা ঘটেছিল টাইটানের সাথে। অনুমান করা হচ্ছে, পানির প্রবল চাপে ডুবোযানটি দুমড়ে গিয়েছিল। এই ধরনের ডুবোযান কার্বন ফাইবার এবং টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি তাতে কোনো ত্রুটি থাকে বা কোনোভাবে চিড় ধরে তা হলে দুমড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এভাবেই হয়তো শেষের মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে ডুবযানের। ওই পানির চাপে কোনো মানুষেরই বেঁচে থাকার কথা নয়। উপরন্তু, সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণও লাশ না পাওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা