পাবিপ্রবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের তদন্তে প্রশাসনের গড়িমসি

পাবিপ্রবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের তদন্তে প্রশাসনের গড়িমসি

পাবিপ্রবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের তদন্তে প্রশাসনের গড়িমসি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এক সাংবাদিকে মারধর ও নির্যাতনের ঘটনার এক মাস শেষ হতে চললেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে তদন্ত কাজে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা। তাদের অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠনের পর প্রশাসন দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু ঘটনার এক মাস শেষ হতে চললেও তারা তদন্ত কাজে কোন অগ্রগতি দেখতে পাননি।

 গত ২৩ জুলাই (রোববার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের যুগ্ম-আহবায়ক ও দৈনিক নয়া শতাব্দীর পাবিপ্রবি প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন পাবনা সদর থানায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ছাত্রলীগের নেতা মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত, মাসুদ রানা সরকার, ইকরামুল ইসলাম সাগর ও তৌফিকুল ইসলাম হৃদয়সহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় ২৫ জুলাই (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামাল হোসনকে আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রতন কুমার পালকে সদস্য সচিব করে পাঁচ (০৫) সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটি গঠনের পর কমিটির আহ্বায়ক ড. মোঃ কামাল হোসেন সাংবাদিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ২৮ জুলাই (শুক্রবার) তদন্ত কাজে অগ্রগতির বিষয়ে প্রক্টরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বুধবার আমাদের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা একটা মিটিং করেছি। আরো দুটি মিটিং করে যারা ভুক্তভোগী এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের সাক্ষাৎকার নিবো । এরপর আগামী মঙ্গলবার (১ আগস্ট) আমাদের এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। কিন্তু ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি তার প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ৬ আগস্ট। পরে এই তদন্ত কাজে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেটা তিনি জানতে পারেননি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উনারা একটি মিটিং করেছেন এবং আরো দুটি মিটিং করে ১ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। কিন্তু তদন্ত কমিটি আমাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে ৬ আগস্ট। এবং আমি ওখানে গিয়ে শুনতে পাই তদন্ত কমিটির এটাই প্রথম মিটিং। এর অর্থ তিনি এটা দাঁড়ায় তিনি ২৭ জুলাই সাংবাদিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস বলেন, একজন সাংবাদিককে দিনে দুপুরে জন সম্মুখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মারধর করেছেন। সেটা একটা জাতীয় ইস্যু হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রশাসন নীরব ছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের একবার খোঁজ নেওয়া হয়নি, মেডিকেল ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেননি। এই ঘটনার পরপরই প্রশাসনের উচিত ছিল দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু আজ এক মাস পার হতে চললেও প্রশাসন নীরব। তদন্ত কাজে কেন অগ্রগতি নেই, কাদের ইশারায় প্রশাসন তদন্ত কাজে বিলম্ব করছেন সেটা আমাদের জানা নাই। আমরা আমাদের সহকর্মীকে মারধরের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই এবং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার নিরাপত্তা চাই।

নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় গড়িমসি ও বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক ড. মোঃ কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত কাজ চলমান আছে। আমরা গত সপ্তাহে অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, এই সপ্তাহেও অনেকের নিয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে আমরা তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা করে সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। একজনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আরেকজনের নাম চলে আসছে যার কারণে সাক্ষাৎকার শেষ করতে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা দুটি মিটিং ইতোমধ্যে করেছি। সাক্ষাৎকারগুলো নেওয়া শেষ হলে আমরা আরেকটি মিটিং করে এই মাসের মধ্যে আশা করি তদন্ত রিপোর্ট দিতে সক্ষম হবো।

তবে এই বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব রতন কুমার পালের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এই প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেন নি। এদিকে পাবনা সদর থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেটির তদন্ত কাজে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জায়গাতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করছে সেজন্য আমরা আপাতত তদন্ত কাজ বন্ধ রেখেছি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তটি না করেন ও ভোক্তভুগী সাংবাদিক আমাদেরকে তদন্তটি করতে বলেন তাহলে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করবো।