মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

ছবি: সংগৃহীত

নীতি সুদহার বা রেপো রেট দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ পুন:নির্ধারণ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরে মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে নীতি সুদসহ সব ধরনের সুদহার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত আজ সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

রোববার ( ২৬ নভেম্বর) মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রেপো সুদ বাড়ানোর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য নীতি সুদহারও বাড়বে। রিভার্স রেপো (জুলাই থেকে তা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ নাম) ও এসএলএফ-স্টান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (জুলাইয়ের আগে ছিল স্পেশাল রেপো) সুদহারও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে  ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ  থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমকি ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।

যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ম অনুযায়ী, এতদিন ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে পরবর্তী মাসের ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হতো। এখন তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে অর্থাৎ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।

চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক।

সেই হিসেবে, চলতি নভেম্বর মাসে ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। তবে নভেম্বররে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, গভর্নর আব্দুল রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গত ২২ নভেম্বর পুনর্গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি) এর প্রথম সভা হয়। সভায় কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান,  অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিকসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে  পর্যালোচনা করা হয়। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং আগামী জুন শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।