চীনা প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

চীনা প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ছবিঃ সংগৃহীত।

ভিয়েতনাম সফরে গেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।বছর ছয়েক আগেও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি সফরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যাওয়ার ঠিক তিন মাস পরে জিনপিংয়ের ভিয়েতনাম সফরকে এবার তাই আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

 

চীন ও ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পর্টির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গত বছর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পর্টির সাধারণ সম্পাদক নুয়েন ফু চাংকে বিদেশিদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছিল চীন।

এ দুই এশীয় প্রতিবেশীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো, রাজনৈতিক মতাদর্শও এক। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে তাদের।

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ জাছারি আবুজা মনে করেন, শি জিনপিংকে অবশ্যই লাল গালিচা বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানাবে ভিয়েতনাম।

 

তিনি বলেন, চীন গত বছর ভিয়েতনামের নেতাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। এখন জিনপিংকেও যথোচিত সম্মান জানাবে ভিয়েতনাম।এ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, চীন সবসময়ই ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। ভিয়েতনামও সমমনোভাবাপন্ন দেশ। তাই ভিয়েতনাম চীনের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পায়।

রয়েছে উদ্বেগের কারণ

আবুজার মতে, চীন ভিয়েতনামকে নিয়ে কিছুটা অখুশিও বটে। কারণ, ভিয়েতনাম এখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো করছে। গত সেপ্টেম্বরে বাইডেন ভিয়েতনাম সফর করেছেন। তখন ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি, সহযোগিতা ও উন্নয়নের জন্য কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি সই হয়েছে।

এর মাধ্যমে ভিয়েতনাম তাদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীন, ভারত, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানও তাদের কৌশলগত অংশীদার।

 

চীনের কক্ষপথে থাকতে চায় না ভিয়েতনাম

চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত বিল হেইটনের মতে, নিজেদের স্বাধীন সত্ত্বা বজায় রাখতেই অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে ভিয়েতনাম।

 

তার বক্তব্য, চীন বিশাল দেশ। কিন্তু ভিয়েতনাম চীনের কক্ষপথে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। তারা এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আবার তারাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করছে। এভাবেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেদের স্বাধীন মনোভাব দেখাচ্ছে ভিয়েতনাম।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক

চীনের সঙ্গে ২০০৮ সালে ভিয়েতনামের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি হয়েছিল। চীনই হলো ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২১ সালে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের বাণিজ্যের পরিমাণ একই বছরে ছিল ১১ হাজার কোটি ডলার।

ফলে চীন ও ভিয়েতনামের নেতাদের মধ্য়ে আলোচনায় বাণিজ্য খুবই গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন ইউসফ ইশাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নুয়েন খাক জিয়াং। তিনি বলেন, জিনপিংয়ের এই সফরের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। আর এই সফরের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।

‘তবে চীনের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক উদ্য়োগে যোগ দেওয়া নিয়ে ভিয়েতনাম খুবই সাবধানে পা ফেলবে। দুই দেশই আর্থিক সহযোগিতার ওপরে জোর দেবে। ভিয়েতনাম চাইবে চীন তাদের দেশে আরও বিনিয়োগ করুক।’