কিশোরগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

কিশোরগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ। ৫২ বছর আগে এই দিনটিতে অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়েছিলো। যেখানে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের বেশির ভাগ জায়গা শত্রুমুক্ত হয়েছিলো, সারাদেশে যখন চলছিলো বিজয়ের আনন্দ মিছিল- তখনও সেই বিজয়ের স্বাদ নিতে পারেনি কিশোরগঞ্জবাসী। সেদিনও কিশোরগঞ্জ শহর ছিলো স্থানীয় পাক দোসরদের শক্ত ঘাঁটি। তারা উড়াচ্ছিলো পাকিস্তানের পতাকা, গুলিতে ঝরাচ্ছিলো এ দেশেরই মানুষের রক্ত। 

অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় স্থানীয় আলবদর-রাজাকারের দল। তারপর কিশোরগঞ্জে জয় বাংলা ধ্বনিতে ওড়ানো হয় বিজয় নিশান। সে মাহেন্দ্রক্ষণটি ছিলো ১৭ ডিসেম্বর। 

সারারাত মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণ ও গোলাগুলিতে বিনিদ্র রাত কাটায় শহর ও শহরতলির লোকজন। পরদিন সকালে সে কাঙ্খিত মুহূর্তটি সামনে আসে। শহরের চারদিক থেকে চতুর্মুখী আক্রমণ করে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনী হানাদারদের হটিয়ে মুক্ত করে কিশোরগঞ্জকে। উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিজয়ের স্বাদ পেয়ে মুক্তিসেনাদের মুখে জয় বাংলা স্লোগান মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলে হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতা নেমে আসে রাস্তায় ।

বাংলার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জন্মভূমি এই কিশোরগঞ্জ। বীর প্রতীক সেতারা বেগম, বীর প্রতীক কর্ণেল হায়দার এবং বীর প্রতীক নূরুল ইসলাম খান পাঠানের বাড়ি এই কিশোরগঞ্জে। তাই তাদের নিয়ে কিশোরগঞ্জবাসী গর্বিত। 

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ি শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে যশোদল ইউনিয়নে। তাই হয়তো ঘাতকের দল ঐ এলাকার মানুষদের টার্গেট করে। ১৩ অক্টোবর স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে (তাদের রক্ষা করবে বলে) আশপাশের গ্রাম থেকে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষকে একসঙ্গে আলোচনার কথা বলে বড়ইতলায় জড়ো করে। তারপর গুলিবর্ষণ ও বেয়নেট চার্জ করে খুন করে ৩৬৫ জন নিরীহ মানুষকে। যা মনে পড়লে আজও শিহরিত হয়ে উঠে এখানের প্রবীণেরা। 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপাল নন্দী জানান, ১৭ ডিসেম্বর সকালে কমান্ডার কবীর উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল শহরের পূর্ব দিক দিয়ে বিজয় ধ্বনিতে কিশোরগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। তারপর শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথ দিয়েও মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে শহরে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানের খবরে মুক্তিকামী জনতাও উল্লাস করে স্বাধীনতার শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিরোধের পরই পাকবাহিনীর এদেশীয় দোসররা আত্মসমর্পণ করে। শহরের শহীদী মসজিদ প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করে পাক দোসররা।এভাবেই বিজয় দিবসের একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের আকাশে উড়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।