মিয়ানমার সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকায় গোলাগুলি থেমেছে

মিয়ানমার সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকায় গোলাগুলি থেমেছে

মিয়ানমার সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকায় গোলাগুলি থেমেছে

বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বেশিরভাগ স্থানে গোলাগুলি থামলেও বৃহস্পতিবারও কিছু কিছু জায়গায় থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার ওপারে মিয়ানমারের তোতারদিয়ায় বেশ কয়েক রাউন্ড গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা মুকিমুল আহসান।এতে গত কয়েকদিনের মতো বৃহস্পতিবারও আতঙ্কে সময় পার করেছেন স্থানীয়রা।তারা জানিয়েছেন, গোলাগুলির কারণে মিয়ানমারে থাকা অনেকেই স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে।

তবে সকাল থেকে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ও মিয়ানমারের তমব্রু সীমন্ত অঞ্চল থেকে নতুন করে গোলাগুলি বা মর্টার শেল নিক্ষেপের কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি।রাত থেকেই এসব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে বলে জানিয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা।এতে ওই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যেও অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত কয়েকদিনে যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলেন তারাও আস্তে আস্তে ফিরতে শুরু করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই খেত-খামারে কাজ করতে দেখা গিয়েছে কাউকে কাউকে। অনেকে দোকানপাট খুলেছেন। বাজারে-হাটে মানুষের আনাগোনা কিছুটা বেড়েছে।তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক সেটা বলা যাবে না। এখনও অনেক বাড়িঘর খালি পড়ে আছে।স্থানীয়রা আতঙ্কে আছেন যে আবার যেকোনো সময় সীমান্তের ওপারে সংঘাত শুরু হতে পারে।

সীমান্ত পাহারায় আরাকান আর্মি

বিবিসির সংবাদদাতা মুকিমুল আহসান জানান, ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত প্রাচীরে আরাকান আর্মির সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় সীমান্তে পাহারা দিতে দেখা গিয়েছে।সেখানে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের সেনা চৌকি বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকায় সেখানে গোলাগুলির শব্দ কমে গিয়েছে।এখন বিদ্রোহীরা ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্ত দিয়ে উখিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা ছাড়িয়ে দক্ষিণের দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।সেক্ষেত্রে টেকনাফ সীমান্তে সংঘাত তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে বিজিবি মহাপরিচালক বুধবার জানিয়েছিলেন, এখনও স্থানীয়দের সতর্ক করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। যখন দরকার হবে তখন জানানো হবে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ ধরনের সংঘাতের ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তের শূন্য রেখায় কয়েকটি লাশ পড়ে আছে। কিন্তু কেউ লাশের কাছে যাওয়ার সাহস করছেন না।এগুলো কাদের মরদেহ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নতুন কেউ প্রবেশ করেনি

এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবি স্থানীয়দের সীমান্ত এলাকার দিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিলেও সেখানে প্রতিনিয়ত উৎসুক মানুষদের ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। তারা কোনো নির্দেশই মানছেন না।তবে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা পর্যন্ত নতুন করে মিয়ানমারের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কারও বাংলাদেশে প্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি।

বিজিবির তথ্যমতে, বুধবার নতুন করে মিয়ানমার থেকে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ ৬৪ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।এ নিয়ে বাংলাদেশে গত চারদিনে আশ্রয় নেয়া বিজিপি, সেনা সদস্যসহ অন্যদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৮ জনে।এরমধ্যে প্রায় আড়াইশ জনকে রাখা হয়েছে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাকিদের দমদমিয়া বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারত সফরে গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভালের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন।দুই দেশ একাধিক বিষয়ে আলোচনা করলেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক অস্থিরতা।বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সেনাদের কীভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হবে তা নিয়ে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাংলাদেশ সীমানার কাছে চলমান উত্তেজনার কারণে আগামী শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।তবে চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে।কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ শাহীন ইমরান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসনসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও জাহাজ মালিকদের এক সভা হয়।সেখান সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী সকল জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।

মি. ইমরান বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘাতের আঁচ মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের এলাকাগুলোতে এসে পড়ছে।সীমান্তে অস্থির পরিস্থিতিতে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত লাগোয়া এই নৌ রুটে রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক সময়ের জন্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে তিনি জানান।টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথ দিয়ে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে।এসব জাহাজ টেকনাফ থেকে যাত্রা করে মিয়ানমার সীমান্তের কাছ দিয়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনে আসা যাওয়া করে।

টেকনাফ থেকে যাত্রা করে মিয়ানমার সীমান্তের কাছ দিয়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনে আসা যাওয়া করে।এর আগে নিরাপত্তার স্বার্থে সেন্ট মার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুল জামান সিদ্দিকী।বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যদের অবস্থা পরিদর্শন করার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন,

“আমরা সাজেস্ট (পরামর্শ) করেছি কোস্টগার্ডসহ আলোচনা করে এই মুহূর্তে সেন্ট মার্টিনসে কয়েকদিন আমরা যদি পরিদর্শন না করি, ওভারঅল (সার্বিক) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, সেটা একদিকে ভালো।”মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তে গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়েছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্র : বিবিসি