কঠোর নিরাপত্তা আইন পাশ করলো হংকং

কঠোর নিরাপত্তা আইন পাশ করলো হংকং

সংগৃহীত

কঠোর নিরাপত্তা আইন পাস করেছে হংকং। দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য আইনটিকে জরুরি মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে সমালোচকদের আশঙ্কা, নতুন এ আইনটি নাগরিক স্বাধীনতাকে আরো ক্ষুণ্ণ করবে।

আর্টিকেল ২৩ নামে পরিচিতি পাওয়া আইনটি বহিরাগত হস্তক্ষেপ এবং বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে করা হয়েছে, যেখানে এমন অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে শহরের বেইজিংপন্থী পার্লামেন্ট আইনটি চূড়ান্তভাবে পাশ করল।

আইনটি ইতোমধ্যেই হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতা, বিদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ এবং বিদেশী বাহিনীর সাথে যোগসাজশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে।

হংকংয়ের নেতা জন লি বলেছেন, এই আইন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে সম্ভাব্য নাশকতা ও স্বাধীন হংকংয়ের ধারণাগুলো ঠেকাতে প্রয়োজনীয়।

তিনি বলছেন, এটি হংকংয়ের মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর জন্য সবাই ২৬ বছর ধরে অপেক্ষা করছিল।

চীনের ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েক্সিয়াং বলেছেন, নতুন আইনের দ্রুত প্রণয়ন হংকংয়ের জাতীয় স্বার্থসমূহ রক্ষা করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগ দেয়ার অনুমতি দেবে।

২০২০ সালে এ রকম একটি আইন পাস হওয়ার পর থেকে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে অনেক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চীনের পরিচালক সারাহ ব্রুকস বলেছেন, নতুন এই আইন এখানকার মানবাধিকারের ওপর আরেকটি বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে।

চীনের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মায়া ওয়াং বলেছেন এটি ‘হংকংয়ে কর্তৃত্ববাদের একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক নতুন এ আইনটিকে ‘একটি পশ্চাদপসরণমূলক পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, এটি সাবেক এই ব্রিটিশ কলোনির ‘অধিকার এবং স্বাধীনতায়’ আরো বেশি হস্তক্ষেপ করবে।

হংকংয়ের সাধারণ মানুষও এ আইনটি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের এই উদ্বেগ মূলত নতুন আইনে বিস্তৃত এবং অস্পষ্ট সংজ্ঞার ব্যবহার নিয়ে।

জর্জ নামের একজন বেসরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার সংজ্ঞা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।’

‘ধরুন আমরা একদল সহকর্মী দুপুরে খেতে গেলাম এবং আমাদের কাজের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। এটি কি কোনো রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস করবে? কেউ যদি গোপন কথা বলে এবং তথ্য ছড়িয়ে দেয় তবে, তাহলে কি আমরা গ্রেফতার হবো?’ বলেছিলেন জর্জ।

তিনি বলেন, ‘এসব কারণেই আমরা বিষয়টি নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছি। কেননা সহজেই আমরা যেকোনো অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারি।’

জর্জ বলেছিলেন, আগের আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে তিনি তার সহকর্মীদের মধ্যে একটি নতুন বিষয় লক্ষ্য করেন। তার ধারণা, তিনি যেখানে কাজ করতেন সেখানকার পাঁচ ভাগের এক ভাগ লোক গত তিন বছরে পদত্যাগ করেছে। অনেকেই দেশ ছেড়েছেন।

কর্পোরেট পরামর্শক লিজেরও নতুন আইনটি নিয়ে একই ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ আইনে বহিরাগত হস্তক্ষেপ বিষয় নিয়ে বলা আছে। এবং এতে বিদেশী সরকার, রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা ব্যক্তি থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা নেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে।

তিনি কাজ করেন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়। সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থার সংজ্ঞা খুবই বিস্তৃত।

লিজ এখন সিঙ্গাপুরে আছে। তার উদ্বেগ এ কারণে যে, যখনই তার কোম্পানি তার নামসহ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করবে তখনই তাকে বিচারের ঝুঁকিতে ফেলা হবে।

বাসিন্দাদের উদ্বেগের বিষয়ে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে, হংকং সরকার বলেছে যে আর্টিকেল ২৩ সাধারণ মানুষের নয়, জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে এমন মানুষদের জন্যই করা হয়েছে।

যে সব নাগরিকরা আইন মেনে চলেন, তাদের কেউ অসাবধানতাবশত ভুল করলে এই আইনের আওতায় আসবে না। তবে অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তাকে কেউ যদি হুমকিতে ফেলে তাহলে তার জন্য এই আইনের প্রয়োগ হবে। বলছিলেন সরকারি একজন মুখপাত্র।

সূত্র : বিবিসি