দুনিয়ার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পরকালে কেমন হবে

দুনিয়ার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পরকালে কেমন হবে

দুনিয়ার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পরকালে কেমন হবে

একজন জান্নাতি নারী জান্নাতে কাকে স্বামী হিসেবে পাবে, তা নির্ভর করবে দুনিয়ায় চলে যাওয়া তার চার অবস্থার ওপর। কারণ একজন নারী পৃথিবীতে সাধারণত ছয়টি অবস্থার যেকোনো একটি অবস্থায় অবশ্যই থাকবে। এর বাইরে নয়।

অবস্থাগুলো হলো—১. হয়তো সে বিয়ের আগেই মৃত্যুবরণ করবে। ২. কিংবা সে মৃত্যুবরণ করবে তালাকের পর অন্য কারো সঙ্গে বিয়ের আগেই। ৩. কিংবা সে বিবাহিতা, কিন্তু তার স্বামী জাহান্নামি। ৪. কিংবা সে তার বিয়ের পর মারা যায়। ৫. কিংবা তার স্বামী মারা গেল আর সে আমৃত্যু বিয়ে ছাড়াই রইল। ৬. কিংবা তার স্বামী মারা গেল, তারপর সে অন্য কাউকে বিয়ে করল।আর এসবের প্রতিটির জন্যই জান্নাতে স্বতন্ত্র হুকুম ও অবস্থা আছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ একজন জান্নাতি নারীর ছয়টি অবস্থা তুলে ধরা হলো—

১. বিয়ের আগেই মৃত্যুবরণকারিণী জান্নাতি নারী : যদি ইহকালে কোনো জান্নাতি নারীর বিয়ে না হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দুনিয়ার এমন একজন পুরুষ অথবা এমন একজন অবিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন, যা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যাবে। কেননা জান্নাতের নিয়ামত ও সুখসম্ভার শুধু পুরুষের জন্য নয়, বরং তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য। আর জান্নাতের নিয়ামতের মধ্যে একটি নিয়ামত হচ্ছে বিয়ে। (মাজমু ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন ২/৩৮)

এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন যে প্রথম দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে আকাশে প্রজ্বলিত নক্ষত্রের মতো। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী থাকবে, যাদের গোশতের ওপর দিয়েই তাদের পায়ের গোছার ভেতরের মগজ দেখা যাবে। আর জান্নাতে কোনো অবিবাহিত থাকবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৪)

২. যে জান্নাতি নারী মৃত্যুবরণ করবে তালাকের পর অন্য কারো সঙ্গে বিয়ের আগেই। তার অবস্থাও এই প্রথম অবস্থার মতোই হবে।

৩. যে জান্নাতি নারীর স্বামী জাহান্নামি : যে জান্নাতি নারী বিবাহিতা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তবে তার স্বামী যদি জাহান্নামি হয়, তখন সে জান্নাতে প্রবেশের পর সেখানে অনেক পুরুষ দেখতে পাবে, যারা বিয়ে করেনি অথবা বিয়ে করেছে; কিন্তু তাদের স্ত্রী জাহান্নামি। তাদের থেকে পছন্দমাফিক একজনকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে পারবে। (মাজমু ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন : ২/৩৮)

৪. বিয়ের পর মৃত্যুবরণকারিণী জান্নাতি নারী : যে নারী বিয়ের পর মৃত্যুবরণ করেছে আর তার স্বামী যদি জান্নাতি হয়, তাহলে এ অবস্থায় সে তাকেই স্বামী হিসেবে পাবে, যার কাছ থেকে সে ইহলোক ত্যাগ করেছে। কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা সানন্দে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৭০)

এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, হুজায়ফা (রা.) তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যদি তোমাকে এই বিষয়টি আনন্দিত করে যে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে, তাহলে আমার পর আর বিয়ে কোরো না। কেননা জান্নাতে নারী তার দুনিয়ার সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গে থাকবে। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের জন্য অন্য কারো সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা তাঁরা জান্নাতে তাঁরই স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ (বায়হাকি, সুনানে কুবরা, হাদিস : ১৩৮০৩)

৫. যে জান্নাতি নারীর স্বামী মারা গেল আর সে আমৃত্যু বিয়ে ছাড়াই রইল। তার অবস্থাও চতুর্থ অবস্থার মতোই হবে।

৬. স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যত্র বিবাহিতা জান্নাতি নারী : কোনো নারীর স্বামী মারা গেছে, এরপর  সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে। আর আগের-পরের উভয় স্বামীই জান্নাতি। এমতাবস্থায় সে যত বিয়েই করুক না কেন, জান্নাতে সর্বশেষ স্বামীকেই সে পাবে। কারণ আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন নারী তার সর্বশেষ স্বামীর জন্যই থাকবে।’ (জামে সাগির : হাদিস : ৬৬৯১, সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ১২৮১)

তবে এই অবস্থার ক্ষেত্রে ভিন্ন মতও আছে। অনেক আলেম অন্য একটি হাদিসকে দলিল হিসেবে এনে বলেছেন, নারীরা চাইলে যেকোনো একজন স্বামীকেই বেছে নিতে পারবে। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি কোনো নারী দুনিয়ায় একাধিক স্বামীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে আর নারীর মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশ করে এবং তার স্বামীরা প্রত্যেকেই জান্নাতে প্রবেশ করে, তাহলে তাদের মধ্যে কে ওই নারীর স্বামী হবে?

রাসুল (সা.) বলেন, হে উম্মে সালামা! ওই নারী নিজের পছন্দমতো তার স্বামীদের থেকে যে কাউকে বেছে নিতে পারবে। আর নিঃসন্দেহে সে উত্তম চরিত্রের স্বামীকেই বেছে নেবে। ওই নারী আল্লাহর কাছে আরজ করবে, ‘হে আল্লাহ! এ ব্যক্তি দুনিয়ায় আমার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো আচরণ করেছে। অতএব তার সঙ্গেই আমায় বিয়ে দিন।’ হে উম্মে সালামা! উত্তম চরিত্র দুনিয়া ও আখিরাতের সব কল্যাণের মাঝে উত্তম। (তাবরানি)

লেখক : মুহাদ্দিস, ছারছীনা দারুস সুন্নাত জামেয়ায়ে নেছারিয়া দীনিয়া দারুস সুন্নাত, নেছারাবাদ, পিরোজপুর।