রাহুল গান্ধীর গাড়ির কাচ ভাঙা নিয়ে তীব্র বিতর্ক

রাহুল গান্ধীর গাড়ির কাচ ভাঙা নিয়ে তীব্র বিতর্ক

রাহুল গান্ধীর গাড়ির কাচ ভাঙা নিয়ে তীব্র বিতর্ক

রাজ্য কংগ্রেসের দাবি, মালদহে রাহুলের গাড়িতে ঢিল মেরে কাচ ভাঙা হয়। মমতা বলেছেন, ওই ঘটনা বিহারে হয়েছে।কংগ্রেসের অভিযোগ, ন্যায় যাত্রায় বিহারের কাটিহার থেকে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের দেওয়ানগঞ্জে ঢোকার পর  রাহুলের গাড়ি আক্রান্ত হয়। ঢিল ছুড়ে রাহুলেরগাড়ির কাচ ভেঙে দেয়া হয়। তারপর ওই ভাঙা গাড়ি নিয়ে রাহুল ৩৮ কিলোমিটার যান।রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, বিহারের কাটিহারে এই কাচ ভেঙেছে। পশ্চিমবঙ্গে নয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''কংগ্রেসের একজন নেতা রাহুলের গাড়িতে কেউ পাথর মেরেছে। আমরা ওসব করি না। এসব করে কী লাভ? ওটা বিহারে হয়েছে। গাড়ি কাচ ভাঙা অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। বিহারে সবে নীতীশ ও বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। ওদের রাগ থাকতে পারে। আমি এই ঘটনার নিন্দা করি।  এখানে যে কেউ শান্তিপূর্ণভাবে মিটিং করতে পারেন। তবে ২ তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তখন মাইক বাজিয়ে মিটিং করা যাবে না। মিটিং করতে হলে ইন্ডোরে করতে হবে।''

রাহুলের সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভার নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ''আমি তো গাড়ির ভিতরে বসেছিলাম। কে ঢিল ছুঁড়েছে জানি না। তবে বুঝে নিন, কে ভাঙতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকে ন্যায় যাত্রায় বাধা দেয়া হচ্ছে।''

কী ধরনের অসহযোগিতা করা হচ্ছে তাও জানিয়েছেন অধীর। তিনি বলেছেন, ''ঠিক ছিল, ভালুকার ইরিগেশন বাংলোয় রাহুল গান্ধী খেয়ে বেরিয়ে যাবেন। তার অনুমতি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমরা একটা মাঠ ঘিরে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তারও অনুমতি পাওয়া যাচ্ছিল না। মুর্শিদাবাদে ঢুকে যে স্টেডিয়ামে রাতে থাকার কথা ছিল, সেখানেও থাকার অনুমতি দেয়া হয়নি।''

অধীরের অভিযোগ, ''কোচবিহার থেকে রাহুলের যাত্রা শুরু হয়েছে। গোটা রাস্তায় রাহুলের ফ্লেক্স, ব্যানার হয় ছিঁড়ে দেয়া হয়েছে, না হয়, তার উপর শাসক দলের ব্যানার লাগানো হয়েছে, পতাকা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।''তিনি বলেছেন, ''সর্বত্র অসহযোগিতার মুখে পড়ছি আমরা। যাত্রা যাতে ব্যর্থ হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব অসুবিধা শুধু রাহুলের জন্য। রাহুলের বড় সভা হচ্ছে, কিন্তু কোনো পুলিশ নেই। সরকার চাইছে, এই যাত্রা নিয়ে বদনাম হয়। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে অসহযোগিতা করছে। পুলিশ ও প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ব্যস্ত।''

ভাঙা গাড়ি নিয়েই ভালুকা হয়ে রতুয়াতে যান রাহুল।রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের অভিযোগ, ''রাহুল গান্ধীর যাত্রার প্রথম দিন থেকে দিল্লিতে কোনো দাদার নির্দেশে তৃণমূল এসব করছে।  বিজেপি-র সঙ্গে সারা বছর ধরে পরোক্ষ সমঝোতা করছে তারা। আর এটাই নাকি তাদের বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নমুনা।''

মুখ্যমন্ত্রী মালদহে যা বললেন

রাহুল পশ্চিমবঙ্গে যে সব জায়গা দিয়ে ন্যায় যাত্রা করছেন, সেখানে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও। এদিন তিনি মালদহেও ছিলেন। পরে মুর্শিদাবাদেও যান, যেখানে রাহুল বৃহস্পতিবার যাবেন। মালদহে কংগ্রেসের প্রবল সমালোচনা করেন মমতা।মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''আমরা একাই লড়ব। কেউ যদি বিজেপি-কে ভারতে হারাতে পারে, তাহলে একমাত্র তৃণমূলই পারবে। মালদহে দুইটি আসনে বারবার কংগ্রেস জিতেছে। আপনাদের জন্য কী করেছে?''

তার দাবি, ''বিজেপি-র বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস লড়বে, ওরা সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে লড়বে। তাতে বিজেপি-র সুবিধা হবে।''তিনি বলেন, ''আমাকে সিপিএম অনেক মেরেছে। সিপিএমের সঙ্গে যারা ঘর করে, তারা বিজেপি-র সঙ্গে ঘর করে। ওদের ক্ষমা করব না। আমি কংগ্রেসকে বলেছিলাম, মালদহে দুইটি আসন দিচ্ছি। আমরাই জিতিয়ে দেব। ওরা বললো, আমাদের অনেক চাই। ওরা সিপিএমের হাত ছাড়বে না। বললাম, তাহলে একটাও দেব না।''

জয়রাম রমেশ যা বললেন

এত কাণ্ডের পরেও কংগ্রেস নেতা ও ন্য়ায় যাত্রার সমন্বয়কারী জয়রাম রমেশ কিন্তু মমতা বা তৃণমূলের কোনো নিন্দা করেননি। তিনি বলেছেন, ''ইন্ডিয়া জোটের উদ্দেশ্য বিজেপি-কে হারানো। মমতা সম্মাননীয় নেতা। মমতার থেকে আমরা প্রেরণা নিই। খাড়গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন।''তিনি জানিয়েছেন, ''মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জেলায় যেতেই পারেন। প্রশাসনিক সমীক্ষার প্রয়োজন আছে। কেন্দ্র থেকে পয়সা আসছে না।''

জয়রাম জানিয়েছেন, ''খাড়গে মমতাকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, ''হতে পারে কিছু লোক ঝামেলা করতে পারে। তাতে আপনার সরকারের বদনাম হবে।''অধীরের মন্তব্য প্রসঙ্গে জয়রামের বক্তব্য, ''ইন্ডিয়া জোট হয়েছে  ভারতের জাতীয় স্তরে। এটা বিধানসভার জোট নয়।'' তিনি জানিয়েছেন, যাই হোক না কেন, রাহুলের যাত্রা থামবে না।

তৃণমূল যা বলেছে

রাহুলের গাড়িতে আক্রমণ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ''অধীর চৌধুরী রাহুলের কাছে তৃণমূল সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি করতে চেয়েছেন। হয় এটা বিহারে হয়েছে অথবা আমার মনে হচ্ছে, অধীরের কুমন্ত্রণায় কংগ্রেসের কেউ এটা করেননি তো। এটারও তদন্ত হওয়া দরকার।''

সিপিএমের প্রতিক্রিয়া

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ''এই ঘটনা  দুর্ভাগ্যজনক। পশ্চিমবঙ্গের মানসম্মান থাকলো না। পশ্চিমবঙ্গ বরাবর অতিথিদের সম্মান জানায়। সেখানে এই সংস্কৃতির পরিচয় দেয়া হলো।''সুজনের দাবি, ''ভাঙা গাড়ি নিয়ে রাহুলকে চলতে হচ্ছে। এটা নিরাপত্তার বিষয়। রাহুলের ঠাকুমা, বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আর রাহুল এখানে আসতে পারবে না। এলে গাড়ির কাচ ভেঙে দেবে দেব। প্রশ্ন করা হবে, কেন আসবে, তুমি কে। এই যে ঔদ্ধত্য়ের মনোভাব তা পশ্চিমবঙ্গকে কুরে কুরে খাচ্ছে।''

বিজেপি যা বললো

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এই রাজ্যে পাথর ছোড়ার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। বিজেপি সভাপতি নাড্ডার গাড়িতে, বিজেপি-র সব নেতা-মন্ত্রীর গাড়িতে পাথর পড়েছে। বিজেপি নেতার গাড়িতে পাথর পড়লে সিপিএম নেতারা সোচ্চার হননি। আর মুখ্যমন্ত্রী এখন উত্তরবঙ্গে গিয়ে বিএসএফের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দিচ্ছেন।''শমীকের বক্তব্য, 'অধীর চৌধুরী তীব্র নিন্দা করেছেন, আবার কংগ্রেসের দিল্লির নেতা বলছেন, মেরেছ কলসির কানা তা বলে কি প্রেম দেব না?''তার মতে, ''এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলে কিছু নেই।''

সূত্র : ডয়চে ভেলে